দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
দেশের বাজারে দামের কেন তারতম্য অনুসন্ধান করতে চাই —শেখ বশিরউদ্দিন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক : বাজারে পণ্যের মূল্যের যে তারতম্য ঘটে, সেটি আসলে বড় কোনো সমস্যার উপসর্গ মাত্র। সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এটার সমন্বিত দায় তৈরি হয়েছে। এটা থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুব সহজে পাওয়া যাবে না। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশির ভাগ সময়ই পেরিয়েছে বিভিন্ন অস্থিরতা নিবারণ করতে।
আমরা সমস্যাগুলো জানতে চাই। আমরা কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কাছে শুনেছি, প্রত্যেকটা ধাপে রসিদ সিস্টেমটাকে কার্যকর করতে পারি কিনা, যদি সম্ভব হয় নিশ্চয়ই করতে চাই।
যেসব জায়গায় সহজে ট্যাক্স কালেকশন করা যায়, সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স দেয়া আছে। যেমন চিনির ওপর মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স দেয়া আছে। কারণ দেশের অধিকাংশ চিনিই আমদানি করা। আমার মনে হয় বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে যে চিনি উৎপাদিত হয় তার ৫০ গুণ বেশি চাহিদা। এখন এটা তো বন্দর দিয়ে আমদানি হয়, শুল্ক আদায় করা খুব সহজ হয়। আবার টেলিকম সার্ভিস বা যেসব জায়গায় শুল্ক কর আদায় করা সহজ, সেখানে বেশি করারোপ করা হচ্ছে। এতে ভোক্তার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রথম ভ্যাট অ্যাক্ট চালু করেন। আমার ধারণা, এতে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছিল। বারবার সংযোজন-বিয়োজন করে এটাকে ইন ইফেক্টিভ করে ফেলা হয়েছিল। ২০১২ সালে এটাকে সংস্কার করে খুবই সুন্দর একটা প্রস্তাব আনা হলো, তখন ব্যবসায়ীরা এটাকে বাস্তবায়ন করতে দেননি। কারণ এটা করলে একটা স্বচ্ছতা তৈরি হতো। এ স্বচ্ছতা ব্যবসায়ীরা চাননি।
আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে দেশে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। কয়েকটা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশে কেউ কোনো বিনিয়োগই করেনি। বিনিয়োগ যদি না হয় তাহলে আমাদের কীভাবে রাজস্ব আদায় বাড়বে, কীভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে, সম্পদের বণ্টন কীভাবে সঠিকভাবে হতে পারে? এ জিনিসগুলোকে মৌলিকভাবে চিন্তা করার সময় হয়েছে।
ব্যাংক খাতকে গত ১৫ বছরে একটা ক্রিমিন্যাল অর্গানাইজেশন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমি শুনেছি বাংলাদেশে নিচের থেকে ৪০টা ব্যাংককে একত্র করলে যত বড় হয়, ইসলামী ব্যাংক একা তত বড়। আমি জানি না কতটা সত্যি। সত্য না হলেও ইসলামী ব্যাংক একটি বিশাল ব্যাংক। এ ব্যাংকটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমি একজন সাবেক ব্যবসায়ী হিসেবে বলতে পারি, আমি ইসলামী ব্যাংকের একজন গ্রাহক ছিলাম। যখন তারা (এস আলম গ্রুপ) টেক ওভার করল আমি মনে হয় ১৫-২০ দিনের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে খোদা হাফেজ বলে বের হয়ে চলে এলাম। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাংকটা ফেল করল। কী পরিমাণ দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে এ ব্যাংকে। ব্যাংক আইনে কী পরিমাণ দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। কীভাবে একটা ব্যাংকের ৮০-৯০ শতাংশ নন-পারফর্মিং লোন হয়? কেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, এটাও আমার আফসোস। অবশ্যই নেয়া উচিত।
আমাদের তেলের বাজারের যেসব ব্যবসায়ী আছেন, যারা ডিও বা এসও নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা ফরওয়ার্ড এ পণ্যগুলো ক্রয় করেন। এরপর তারা গণমাধ্যমে প্রচার করতে থাকেন, বাজারে একটা সংকট আছে। তখন ভোক্তা পর্যায়ে ও খুচরা পর্যায়ে মজুদ শুরু হয়। তখন তাদের পোয়াবারো হয়। এ মজুদদারি নিয়ে যারা নিউজ তুলে দেন, দয়া করে দেয়ার সময় চিন্তা করেন, কার পক্ষে যাচ্ছে এটা? মজুদদারের নাকি ভোক্তার। এতে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে, অসুবিধা নেই। আমি আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের যে দাম দেখি, আমার হিসাবে দেশে দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। আমার হিসাবে তো দাম কমার কথা।
ভোক্তা অধিকার আছে, প্রতিযোগিতা কমিশন আছে, ব্যবসা প্রসারের জন্য টিসিবি আছে। সর্বোপরি বাজারকে ভোক্তার জন্য সহনীয় করতে ট্যারিফ কমিশন এবং এনবিআর যে হাতে হাত রেখে কাজ করেছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা বাজারে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত একটা অনুসন্ধান করতে চাই—কী কী কারণে মূল্যের পরিবর্তন হচ্ছে তা দেখতে।