দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

২ স্ত্রীর দ্বন্দ্বে ৫ বছর ধরে মর্গে স্বামীর লাশ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাজধানীর ফার্মগেটের ক্যাপিটাল মার্কেটের মালিক খোকন মারা যান ২০১৪ সালের ২৬ জুন। তিনি অবশ্য নন্দী খোকন বা খোকন চৌধুরী, খোকা চৌধুরী এবং রাজিব চৌধুরী নামেও পরিচিত। তার রয়েছে দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম মীরা নন্দী। খোকন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হাবিবা আক্তারকে বিয়ে করেন। এখন দুই স্ত্রী নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী লাশ সৎকারের ব্যবস্থা করতে চাইছেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

কিন্তু খোকন হিন্দু না মুসলমান- তা নির্ধারণে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় লাশ ঢামেক মর্গের হিমাগারে পড়ে আছে। এখন আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দুই পরিবার। কিন্তু এই অপেক্ষার পালা আর শেষ হচ্ছে না। লাশের দাফন বা দাহ কোনোটাই হচ্ছে না।

খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা আক্তার জানান, ২০১৪ সালের ১৫ জুন খোকনকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ জুন তিনি মারা যান। পরে তার লাশ বারডেমের মর্গে রাখা হয়। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আদালতের নির্দেশে ১৫ নভেম্বর থেকে লাশ ঢামেক মর্গের হিমাগারে রাখা হয়।

তিনি বলেন, আমার স্বামী মুসলমান। আমি চাই তার লাশ দাফন করতে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে আমার স্বামীর লাশ মর্গে পড়ে আছে। খোকনের প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের বলেছি, আগে লাশ দাফন হোক, পরে সব কথা শোনা যাবে। কিন্তু তারা তা মানতে নারাজ। নিঃসন্তান হাবিবা আক্তার আরও জানান, খোকন ১৯৮০ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু থেকে মুসলমান হন। ১৯৮৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর জানতে পারেন তার স্বামীর আগের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এত বছর সেই স্ত্রী-সন্তানরা কেউ খোঁজ নেননি। কিন্তু মারা যাওয়ার দুই দিন আগে থেকে হাসপাতালে সবাই আসা-যাওয়া শুরু করেন। তারপর লাশ নিয়ে টানাটানি শুরু হলে রমনা থানা থেকে পুলিশ আসে। তারপর সিএমএম আদালত হয়ে এখন নিম্ন আদালতে মামলা চলছে।

জানা গেছে, দুই পরিবারের দাবি ও মরদেহ নিয়ে টানাহেঁচড়ার মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বিপুল সম্পত্তি। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় তিনতলা মার্কেটসহ শত কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিক ছিলেন খোকন। এই সম্পত্তি দখলে রাখতে প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানরা তৎপর। খোকনের জীবনযাত্রাও ছিল রহস্যেঘেরা। দুই পরিবারের সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিল। শেষ দিকে উত্তর শাহজাহানপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ওই এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তেন এবং ঈদুল আজহার সময় গরু কোরবানি করতেন। প্রথম স্ত্রী ও তার দুই সন্তান থাকতেন রায়ের বাজারের বাসায়। সেখানেও যাতায়াত ছিল খোকনের। সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী তাদের সঙ্গে পূজা-পার্বণে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় মন্দিরেও তিনি যেতেন।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close