বিশ্বজুড়ে

বিক্ষোভে জ্বলছে উত্তরপ্রদেশ, সংঘর্ষে নিহত ৬

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতের উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। রাজ্য পুলিশ বলছে, শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ওপি সিং দাবি করেছেন, বিক্ষোভকারীদের একজনও পুলিশের গুলিতে মারা যাননি। এমনকি আমরা একটি বুলেটও নিক্ষেপ করি নাই।

পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, যদি কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটে; তাহলে সেটি বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে হয়ে থাকতে পারে।

রাজ্য পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের বিজনরে দু’জন, এছাড়া স্যামভাল, ফিরোজাবাদ, মীরাট এবং কানপুরে একজন করে বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।

শুক্রবার জুমআর নামাজের পর উত্তরপ্রদেশের অন্তত ১৩টি জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কারফিউ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য পুলিশ লাঠি চার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।

জুমআর নামাজের আগে রাজ্যের বিভিন্ন মসজিদে কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হলেও সাধারণ মানুষ তা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। দেশটির বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি রাজধানী নয়াদিল্লি বিক্ষোভকারীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ সময় দিল্লির আকাশ-বাতাস ‘মোদি হটাও’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিধান রেখে দেশটির নতুন এই নাগরিকত্ব আইন ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে টানা বিক্ষোভ করছেন ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার দেশটিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেছে পুলিশ। গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে অন্তত সাত বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছিল। কিন্তু পুলিশ এতে বাধা দেয়ায় অন্যান্য দিনের মতো মুহূর্তেই এই বিক্ষোভ সাংঘর্ষিক রূপ নেয়। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় শহর ম্যাঙ্গালুরুতে গতকাল বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানির পর শুক্রবার সেখানে তিনদিনের কারফিউ জারি করা হয়েছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার গত ১১ ডিসেম্বর দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাসের পর এই বিক্ষোভের শুরু হয়।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি এবং জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সে দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।

সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এ নতুন নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

এই আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। সাম্প্রদায়িক সীমায় দাঁড়িয়ে ভারতে বিভক্তি তৈরি করতে এই আইন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির বিভিন্ন বিরোধী দল, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ মুসলিম।

/এএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close