জীবন-যাপনবিশ্বজুড়ে

ইউরোপের সবুজ শহর

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক : পরিবেশ বাঁচানো ও জ্বালানি খরচ কমানো সহ অন্যান্য কারণে ইউরোপের শহরগুলোতে দিন দিন ‘সবুজ জ্বালানি’-র ব্যবহার বাড়ছে৷ শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত কার্বন নির্গমণের হার অর্ধেকে কমে গেছে।

শহরগুলোতে যান্ত্রিক পরিবহনের বদলে বাইসাইকেল, বন্যা প্রতিরোধে সবুজ দেওয়াল, প্লাস্টিকের ব্যাগ পরিহার, বিদ্যুতের উৎস হিসেবে হাইড্রোপাওয়ার ও সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়।

বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ আটটি শহরগুলো হলো কোপেনহেগেন, (ডেনমার্ক), রেকইয়াভিক, (আইসল্যান্ড),কুরিটিবা, (ব্রাজিল), সান ফ্রান্সিসকো, (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ফ্রাংকফুর্ট, (জার্মানি), ভ্যানকুভার, (কানাডা),কিগালি, (রুয়ান্ডা),লিবিয়ানা, (স্লোভেনিয়া)।

কোপেনহেগেন, ডেনমার্কঃ
২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শহর হতে চায় কোপেনহেগেন৷ ১৯৯৫ সাল থেকে এখন অবধি শহরটি কার্বন নির্গমণের হার অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে৷ শহরের একটি বড় অংশকে গাড়িমুক্ত করে এবং উচ্চমানে গণপরিবহন এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেন গড়ে ক্রমশ সবুজ শহরে পরিণত হচ্ছে ডেনমার্কের এই রাজধানী৷

রেকইয়াভিক, আইসল্যান্ডঃ
আইসল্যান্ডের রাজধানীতে তাপ এবং বিদ্যুতের পর্যাপ্ত নবায়নযোগ্য সাপ্লাই রয়েছে৷ মূলত হাইড্রোপাওয়ার এবং জিওথার্মাল থেকে আসে এগুলো৷ শহরটির ৯৫ শতাংশ বাড়ির হিটিং সিস্টেম সরাসরি জেলা হিটিং নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত, যা এক চমৎকার ব্যাপার৷ ২০৪০ সাল নাগাদ শহরের সকল গণপরিবহণ জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করতে হয় নগর কর্তৃপক্ষ৷ সেখানে সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়৷

কুরিটিবা, ব্রাজিলঃ
ব্রাজিলের অস্টম বড় শহর কুরিটিবার ৬০ শতাংশ মানুষ শহরের বাস নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল৷ শহরটিতে আড়াইশ’ কিলোমিটার সাইকেল লেন রয়েছে৷ পাশাপাশি হাঁটার জন্যও আছে বিশেষ ব্যবস্থা৷ শহরটির প্রাকৃতিক সবুজ দেয়াল বন্যা রোধে সহায়তা করে

সান ফ্রান্সিসকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ
সান ফ্রান্সিসকো শহরে ২০১৬ সালে এক আইন পাস করা হয় যাতে নতুন সব ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়৷ শহরটিতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ সেই ২০০৭ সাল থেকে৷ ২০২০ সাল নাগাদ নিজেদের আর্বজনামুক্ত শহর ঘোষণার পরিকল্পনা করছে সান ফ্রান্সিসকো৷

ফ্রাংকফুর্ট, জার্মানিঃ
২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর শহরে পরিণত হতে কাজ শুরু করেছে ফ্রাংকফুর্ট৷ নতুন তৈরি হওয়া ভবনগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ পিভিসির মতো বিতর্কিত সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ শহরটি আবর্জনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এক কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করে৷

ভ্যানকুভার, কানাডাঃ
২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ শহরে পরিণত হতে চায় ফ্রাংকফুর্ট৷ ২০০৭ সালের তুলনায় সেসময় কার্বন নির্গমণের মাত্রা ৩৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় শহরটি৷ শহরটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের প্রায় সবটাই আসে হাইড্রোইলেক্ট্রনিক ড্যাম থেকে৷ তবে হিটিং এবং গণপরিবহণে এখনো গ্যাস এবং তেল ব্যবহার করে শহরটি৷

কিগালি, রুয়ান্ডাঃ
কিগালিকে বলা হয় আফ্রিকার সবচেয়ে পরিষ্কার শহর৷ এটি পথচারী এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেন করার পরিকল্পনা করেছে৷ সেখানে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ আর নগরের বাসিন্দারা মাসে একদিন নগর পরিষ্কারের কাজ করেন৷ তবে নগর পরিষ্কার রাখতে গিয়ে নগরের বাসিন্দাদের উপর বাড়াবাড়িরকম চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷

লিবিয়ানা, স্লোভেনিয়াঃ
ইউরোপের সবুজ রাজধানী ২০১৬ খেতাবজয়ী এই শহরে বিদ্যুতের উৎস হাইড্রোপাওয়ার৷ গণপরিবহণ, পথচারীদের এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে শহরটি৷ ইউরোপের প্রথম শজর হিসেবে আবর্জনার মাত্রা শূণ্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শহরটি, ইতোমধ্যে আবর্জনার ৬০ শতাংশ রিসাইকেল করতে সক্ষম হয়েছে শহরটি।

উল্লেখ্য যে, শহরগুলো ভিন্ন ভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সফল সবুজ শহরে পরিণত হয়েছে৷ উল্লেখ্য প্রকল্পগুলি হলো – বিশুদ্ধ বাতাসের শহর ,কার্বন নিরপেক্ষ শহর, হাইড্রোজেন বাসের , নঁতে ট্রাম, সবুজের সমাহার, আবর্জনা দিয়ে ঘর গরম, বৃষ্টির পানি ধরে রাখা।

/আরএইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close