দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

কাউন্সিল ঘিরে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আগামী অক্টোবরে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। বরাবরের মতো এবারও কাউন্সিল ঘিরে নেতা-কর্মীদের কর্মতৎপরতা বেড়ে গেছে। সারাদেশেই দলটির মধ্যে একদিকে যেমন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনি পদপ্রত্যাশী ও পদে থাকা নেতাদের টেনশনের পারদ ততই যেন চড়ছে। কে পদ হারাবেন, কে পদোন্নতি পাবেন, আবার নতুন কে কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসছেন—এসব নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা, গুঞ্জনের কমতি নেই। কার কপালে শেষ পর্যন্ত কী জুটবে কেউই নিশ্চিত নন। সবাই তাকিয়ে আছেন সভানেত্রীর দিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া অন্য কাউকে সভানেত্রী পদে কাউন্সিলররা মেনে নেবেন না, এটা সর্বজনবিদিত। তাই সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে ঠিক রেখে কে আসতে পারেন বাকি নেতৃত্বে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

দলের ভেতরে-বাইরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো সাধারণ সম্পাদক পদ। যে পদে ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি আসছে কোনো নতুন মুখ? এমন অনেক প্রশ্ন সামনে রেখে দলীয় কার্যালয় এখন জমজমাট। যারা আগে মাসে একবারও কার্যালয়মুখী হতেন না, এখন তারাও নিয়মিত। দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারা নিয়মিত সময় দিচ্ছেন। মধ্যরাতেও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো নেতা-কর্মীদের পদচারণে আর আড্ডায় সরগরম হতে দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশের যাতায়াত বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ও তৃণমূলে। তবে সম্মেলন ঘিরে বিভিন্ন নেতার এক অদৃশ্য তত্পরতা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন না। এদিকে এবারের জাতীয় সম্মেলনে দলকে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে দেশজুড়ে পুরোদমে সাংগঠনিক তত্পরতা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করেছেন। তারা এক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে। তৃণমূল কমিটি গঠনের নিমিত্তে অনেক জেলায় বর্ধিত সভা সম্পন্ন করে এসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর শেষ হবে চলতি কমিটির মেয়াদ। কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে যথাসময়েই সম্মেলন সম্পন্ন করতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য প্রস্তুতি নিতে এক মাস আগেই দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রবীণ-তরুণদের সমন্বয়ে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।

সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলন প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নেতাদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরে এলেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, গঠনতন্ত্র সংশোধন, ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হবে। এর আগে ২০তম জাতীয় সম্মেলনেও বেশ কয়েকজন তরুণকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে স্থান দেয়া হয়। তাদের ‘পারফরম্যান্সে’ খুবই সন্তুষ্ট দলের হাইকমান্ড। এ কারণে ২১তম সম্মেলন সামনে রেখে তৃণমূল আওয়ামী লীগেও তরুণদের স্থান দিতে চান তিনি। তাই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবীণদের পাশাপাশি তরুণদের হাতে সাংগঠনিক দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্ রাজনৈতিক দল। এর একটি গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র রয়েছে। কাউন্সিলররাই নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। আমি মনে করি, আগামী দিনে যারা দলকে আরো বেশি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, আরো বেশি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন, কাউন্সিলররা তাকেই নেতা হিসেবে নির্বাচন করবেন।

২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল। সেই সময়ের দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্মেলনের আগে চমকের কথা বলেছিলেন। চমক হিসেবেই সামনে আসেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের দায়িত্ব নেয়ার পর নানাভাবে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন তিনি। ৬৭ বছর বয়সি ওবায়দুল কাদের হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি আবারও ফিরে এসেছেন সবার মাঝে। আওয়ামী লীগের কনভেনশন অনুযায়ী পর পর অন্তত দুবার সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার প্রচলন চলছে অনেক দিন ধরে। তবে এই পদে এবার পরিবর্তন আসতে পারে ধরে নিয়ে দলের অন্তত হাফ ডজন নেতা তাদের কর্মকাণ্ডে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও সারা দেশের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এছাড়া দলের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের প্রায় সব কটিতে আসতে পারে নতুন মুখ। যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যারা টানা তিন সম্মেলনে একই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন, এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাদের দয়িত্ব পুনর্বণ্টন হচ্ছে, এটা অনেকটা নিশ্চিত বলে জানান একজন নেতা।

সূত্র জানায়, দলকে শক্তিশালী রাখতে সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যাতে দলে সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারেন, সে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন নেতা একই সময়ে মন্ত্রী হলে তাকে দল ও সরকারে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ অবস্থায় দুই দিকে সময় দিতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাই এ বিষয়টিও আলোচনায় আসছে জোরালোভাবে।
সূত্র- ইত্তেফাক
/এ কে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close