বিশেষ প্রতিবেদনসাক্ষাৎকার

ক্যাম্পাসের তরুণ অভিভাবক

বিশেষ প্রতিবেদক : ছোটবেলায় মুক্তিযোদ্ধা বাবা-নানার কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনতেন শিশু সাদ। সে থেকেই বেড়ে উঠা কোমল হৃদয়ে দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার বন্ধন জন্ম নেয়। তবে ফেনীর জেলার ছেলে সাদ বিন কাদের চৌধুরীর স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তেমন সুখকর ছিল না। বিষন্ন মনে রাজনীতি থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করেছেন। তবে সময়ের সাথে উপলব্ধি করেন, রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। অর্জন করেছে দাবী দাওয়া। এভাবেই নিজের বেড়ে উঠা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হয়ে উঠার গল্প বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী। ডাকসু নির্বাচনে ৩য় সর্বোচ্চ ভোটে পেয়েছেন তিনি। পড়ছেন ঢাবির ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগে।

বাবা নুর কাদের চৌধুরী এবং মা দিল আফরোজ চৌধুরী’র পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাদ। ফেনীর চাঁনগাজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে পাড়ি জমান ঢাকার নটরডেম কলেজে। এরপরে পড়াশোনার সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সাদের ভাষায় “বাবা রাজনৈতিক কারণে খুব ব্যস্ত থাকতেন। সবার বিপদে আপদে সব সময় পাশে থাকতেন। সবার মাঝে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর। যখন কাউকে নিজের পরিচয় দিতাম তখন সবাই আমাকে একটা আলাদা সম্মান দিয়ে খাতির করত। ভাবতাম বড় হয়ে বাবার মতই হবো। রাজনৈতিক শিক্ষাটা আমার বাবার কাছ থেকেই পাওয়া। আমার বাবাই আমার মডেল, আজীবন বাবার মতই হতে চেয়েছি।”

ছবি: সাদ বিন কাদের চৌধুরী (ডাকসু ছাত্রনেতা)

ঢাবিত প্রায় আট বছরের রাজনৈতিক লম্বা সময় পার করছেন। নেই কোন অভিযোগ। এ সম্পর্কে সাদ জানালেন, “সবসময় ভালো কাজের সঙ্গে ছিলাম। লাভের আশা ছাড়াই ভালো কাজ করতে থাকলে একসময় ভালো কাজগুলো অবশ্যই ভালো রিটার্ন দেয়। আমার ভালো কাজের ফলস্বরুপ আমি ডাকসু নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি। যাদেরকে এত দিন সাহায্য সহযোগিতা করেছি, বিপদে যাদের পাশে দাঁড়িয়েছি তারাই আমার নির্বাচনের সবচেয়ে বেশি প্রচারণা করেছে। আমি তাদের এই প্রতিদানকে সম্মান করি। ভালো কাজগুলো আপনাকে কবে আপনার প্রাপ্য সম্মান প্রতিদানস্বরুপ ফিরিয়ে দিবে আপনি বুঝতেও পারবেন না। তবে প্রতিদান আপনি অবশ্যই পাবেন।”

আগের সাদ আর এখন ডাকসু নেতা সাদ’র এর মধ্যে কেমন পার্থক্য খুজে পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে, হেসে দিয়ে সাদ বলেন, আগে তো শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সংযুক্ত ছিলাম। এখন সুযোগ এসেছে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হওয়ার। হচ্ছেও তাই। আগে ধ্যান-জ্ঞান সব এক কেন্দ্রীক থাকলেও এখন সারা দেশের চোখ ডাকসুর দিকে। তাই ভালো কাজের চাপও বাড়ছে। অন্যদের চোখে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ পার করছি প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি “স্বপ্ন সাজাই” নামক সামাজিক একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা ও কথার অভিজ্ঞতা নিয়ে তরুণ সাদ জানান, নানা যখন মারা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন দেখতে গিয়েছিলেন নানাকে। তখন আমাকে (সাদকে) কোলেও নেন শেখ হাসিনা। ছোট হওয়ায় সাদের এসব স্মৃতি মনে নেই। টিভিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে আমার মা বললো ছোট বেলার সেই স্মৃতির কথা তুলে ধরেন।। চট্টগ্রামে নির্বাচনের প্রচারণার সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, “আমি আমিনুল করিম মজুমদার খোকা মিয়া’র (নানা) নাতি। অবাক করা এক চওড়া হাসি দিয়ে তিনি বলেছিলেন “থার্ড জেনারেশন ।”

“বাংলাদেশ একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে” দেশকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখেন সাদ। যদি কখনো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা আসে তাহলে তিনি সর্বপ্রথম রাজধানী ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চান। ঢাকাকে সুন্দর, মুক্ত ও শান্তির শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চান সাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close