জীবন-যাপনস্বাস্থ্য

জানেন কি ভালো ঘুমের কৌশলগুলো!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক তখন স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণ করে। শরীর ক্ষতিকারক উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলে সব ঠিকঠাক করে যাতে জাগার পরে শরীর আবার ঠিকমতো কাজ করতে পারে।

একটুখানি ঘুমের অভাবও আমাদের ভালো থাকা না থাকাকে অনেকখানি প্রভাবিত করে। অনেকেই আছেন যারা এক রাত না ঘুমালেই একদম ভেঙে পড়েন। তিন রাত না ঘুমালে আমাদের কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়।

আপনি ক্লান্ত, লম্বা একটা ঘুম দেয়ার জন্য শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না। বহু লোকেরই এ সমস্যা হয়েছে কোন না কোন সময়।

জেনে নিন ভালো ঘুমের জন্য কিছু পরীক্ষিত কৌশল:

১. প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন: আপনি কি সত্যি সত্যিই ক্লান্ত?

আপনি যদি সত্যি বিছানায় যাবার জন্য তৈরি হন, তাহলে সহজেই ঘুম এসে যায়। তবে একজনের কাছে যা ‘স্বাভাবিক’ ঘুমানোর সময়, অন্য কেউ হয়তো সে সময়টায় ঘুমাতে পারেন না। যদি আপনার এ সমস্যা থাকে, তাহলে দিনের বেলা যত বেশি সম্ভব সময় প্রাকৃতিক আলোর মধ্যে কাটাতে চেষ্টা করুন এবং সেটা শুরু করুন ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই।

বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এর ফলে রাত-জাগা লোকদের ‘দেহ-ঘড়ি’কে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা যায়।

দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাবার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ এর ফলে শরীরে যে এ্যাড্রিনালিন নি:সৃত হয়, যা হয়তো আপনাকে ঘুমোতে দেবে না।

২. আপনি কি খাচ্ছেন বা পান করছেন সেদিকে নজর দিন

প্রকৃতপক্ষে ভালো ঘুমের প্রক্রিয়া শুরু হয় বিছানায় যাওবার সময়ের অনেক আগে। তাই ঘুমাতে যাবার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাফেইন আছে এমন কোন পানীয় পান করা বন্ধ করে দিন। ক্যাফেইন এমন এক জিনিস যা আপনার শরীরে থাকে অন্তত ৯ ঘণ্টা। কাজেই ভালো করে ঘুমাতে চাইলে দুপুর ১২টার পর থেকেই চা, কফি এবং কোক-পেপসির মতো ‘ফিজি ড্রিংকস’ পান বাদ দেয়ার কথা ভাবুন।

অনেকেই খালি পেটে ঘুমাতে পারেন না। তবে একেবারে ভরপেট খেয়ে বিছানায় গেলেও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। যদি পারেন তাহলে ঘুমের সময়ের প্রায় চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এবং তাতে ভারী গুরুপাক খাবার বা চিনি-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ঘুম না হওয়া বা রাতে জেগে ওঠার সমস্যা কেটে যাবে।

৩. ঘুমের আগে রিল্যাক্স করার জন্য কিছু করুন

বিছানায় যাবার আগে এমন একটা কিছু করুন যা আপনার দেহ ও মনকে চাপমুক্ত করবে। এটা আপনাকে প্রতিদিনই করতে হবে, যাতে এটা করলেই আপনার শরীর এবং মন্তিষ্ক বুঝে যায় যে ঘুমানোর সময় হয়েছে। এটা যে কোন কিছু হতে পারে। যেমন হালকা গরম পানিতে গোসল, মেডিটেশন বা ধ্যান করা, আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলা, ডায়েরি লেখা, বই পড়া, বা আলো কমিয়ে দিয়ে গান শোনা

৪. ঘুমের সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ভুলে যাবেন না

ঘুমের জন্য আদর্শ পটভূমি তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে যান, ঘুমের আগে চা বা কফি পান এড়িয়ে চলুন, ঘরে ঘুমের পরিবেশ তৈরির দিকে নজর দিন। আমাদের বেডরুমের হওয়া উচিৎ ঘুমের জায়গা, অন্য কিছুর নয়। যে ঘর অন্ধকার, অতিরিক্ত গরম নয়, জিনিসপত্রে ঠাসা নয়, যেখানে নানা যন্ত্রপাতি বা মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয় এমন কিছু নেই।

ঘুমের এক ঘণ্টা আগে থেকে টিভি-স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এগুলো থেকে যে নীল আলো ছড়ায় তা আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমোতে দেয় না। যদি আপনি রেডিওতে কিছু শোনেন তাহলে স্লিপ টাইমার ব্যবহার করুন যাতে এটা একটা নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।

৫. আপনার ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন

আপনি হয়তো কোন সফল উদ্যোক্তা বা বিশ্বনেতার সম্পর্কে গল্প শুনেছেন – কীভাবে তারা মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমিয়েও পুরো দিন কর্মক্ষম থাকেন। সত্য কথাটা হলো: বেশির ভাগ লোকই এটা পারে না। কম ঘুম হলে তা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বহু বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

রাতের পর রাত যদি পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হয় – তাহলে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ঘুম কম হলে তা আপনার আয়ুও কমিয়ে দেয়।

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নিশ্চিত করুন যেন প্রতি রাতে আপনার সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হয়। এর মানে হচ্ছে- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা এবং তা মেনে চলুন ছুটির দিনেও।

/এনএ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close