আমদানি-রপ্তানীদেশজুড়েপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

জাপানকে ঘিরে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে উৎপাদিত পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে বাজারজাত করতে সমুদ্রবন্দর উন্নয়নসহ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় জাপান। এ বন্দরের আওতা বৃহত্তর আঞ্চলিক বাণিজ্য ধরতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, জাপান বাংলাদেশকে ঘিরে এই অঞ্চলের যে বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু (হাব) গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রীর চলমান সফরে আরো গতিশীল হবে। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়গুলোকে আরো ফলপ্রসূ করতে বাংলাদেশের পক্ষে জাপানের প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা চেয়েছেন।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে দেশটির সঙ্গে মোট আটটি বিষয়ে চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগসংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তিও রয়েছে।

জাপানকে ঘিরে আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডিং পার্টনারশিপ : ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের পরে আড়াইহাজারে জাপানের সহযোগিতায় শিল্প নগরী তৈরি হয়েছে। সেটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এই স্মারক সই করা হয়েছে।

মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন অন শিপ রিসাইক্লিং : এটি একটি বড় ব্যাবসায়িক খাত। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শিপ রিসাইক্লিং দেশ। পরিবেশ দূষণ রোধ করে ভালোভাবে এই শিল্পের বিকাশ করার জন্য এই স্মারক।

মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন অন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক : একটি দায়িত্বশীল উৎপাদনশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তৈরি করার জন্য সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ উন্নয়নে জাপানের সঙ্গে ইকোনমিক পাটর্নারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সক্ষমতা বাড়াতে মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন (এমওসি) স্বাক্ষর হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দুই ইপিএ নিয়ে জাপানের সঙ্গে যৌথ ঘোষণাও হয়েছে।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং পুরনো। তবে মাঝখানে কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটা ধাক্কা খায়। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে সেই দূরত্বও অনেকটা কমে আসতে পারে। তাই দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে দেশটির অর্থনৈতিক সহায়তা প্রয়োজন। এ জন্য অবকাঠামো খাতে জাপানের দেওয়া সহায়তাগুলো ত্বরান্বিত করা ও বাজেট সহায়তা ছাড় করাতে সহায়ক হবে এই সফর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, জাপানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের (এমওসি) ফলে দেশের শিল্প বহুমুখীকরণে দক্ষতা ও জ্ঞানভিত্তিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণ ঘটবে। এ সময় বৈশ্বিক বাণিজ্যে নানা চ্যালেঞ্জ আসবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এমওসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কেননা এ সময় জাপান থেকে কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা যায়, ইপিএ করার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরের আগে চলতি মাসে ১০-১২ এপ্রিল এই গ্রুপের প্রথম সভা হয়। এ ছাড়া ২০২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপের কাজ শেষ হবে বলে আশা কর্মকর্তাদের। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের মধ্যে ইপিএ কার্যকর হবে। তবে মাঝখানে এক বছর (২০২৫ সাল) জাপান তাদের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় নেবে।

তবে জাপানের আগ্রহ থাকার পরও বাংলাদেশ সক্ষমতার অভাবে জাপানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন দেশের বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।

/কালের কন্ঠ/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close