দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে ইসি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলিয়ে বাজেট ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হবে। এরপর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

গতকাল রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন কভিড-১৯ আক্রান্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল। অন্য চার নির্বাচন কমিশনারও এতে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের আগের বৈঠকে ইভিএমের বাজারদরসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ায় সভাটি মুলতবি করা হয়েছিল। গতকালের সভায় সবকিছু পর্যালোচনা করে প্রস্তাবিত প্রকল্পে সায় দেয় কমিশন। ইভিএম-সংক্রান্ত ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নেয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তত্কালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদার কমিশন এসব ইভিএম কেনার প্রথম প্রকল্প নেয়। নানা বিতর্কের পর ওই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়।

গতকালের বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০-৮০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। তাই ১৫০টি আসনে নির্বাচন করতে হলে নতুন করে ইভিএম কিনতে হবে। এজন্য ইসি সচিবালয় নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব কমিশন সভায় তুলেছিল। আমরা এটার অনুমোদন দিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তারা অনুমোদন করবে কি করবে না এটা তাদের বিষয়।

তবে নির্বাচন কমিশন ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নিলেও দেশে এ যন্ত্র বা এ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। গত বুধবার বর্তমান নির্বাচন কমিশন কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে। এতে নিজেদের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এ পরিকল্পনা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হওয়া ইসির সংলাপের ফল পরিবর্তনের অভিযোগে সমালোচনা। অভিযোগ ওঠে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপক্ষে মত দিলেও ইসি তাদের কর্মপরিকল্পনায় পক্ষে মত দেয়া দলের সংখ্যা বেশি দেখিয়েছে।

২০০৭-১২ সালে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ছহুল হোসাইন। দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ভোট সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা করে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার রীতি চালু করে তার কমিশন। রীতি অনুযায়ী বর্তমান কমিশনও চলতি বছরের আগস্টে সংলাপে নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ৯টি দল অংশ নেয়নি। দুটি দল অংশ নিতে আগ্রহ দেখালেও নির্ধারিত সময়ে যোগ দিতে পারেনি। ২৮টি দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ হয়েছে। কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়, ১২টি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে, ১১টি দল শর্তসাপেক্ষে পক্ষে এবং ৬টি দল সরাসরি বিপক্ষে মত দিয়েছে। ইভিএমের বিপক্ষে বললেও কর্মপরিকল্পনায় পক্ষে দেখানো হয়েছে বলে কয়েকটি দল এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছে।

তথ্য পরিবর্তন করে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, ইসির কর্মপরিকল্পনায় সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। মতামত পাল্টে দেয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ, তথ্য সূক্ষ্মভাবে একাধিকবার যাচাই করে কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে যিনি ইসির বিপক্ষে বলেছেন, তার কথা আমরা পক্ষে লিখিনি। যারা সরাসরি পক্ষে বলেছেন, তাদেরটাও বিপক্ষে নিইনি। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আলোচনায় যা লিখে নিয়ে এসেছিল, শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থানে ছিল। আর কিছু দল ছিল যারা লিখে যা নিয়ে এসেছিল, আলোচনায় ভিন্ন মত দিয়েছিল। আমরা সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য সন্নিবেশ করেছি। কারণ আমরা তো লিখিত মতামত চাইনি, ফলে লিখিত মতামতে কী লেখা হয়েছিল তা আমলে নেয়া হবে না। আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলো প্রকাশ করা হবে। কে কী বলেছেন তা তো ভিডিওতেই আছে, দরকার পড়লে সেগুলোই উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিক যৌথ বিবৃতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করাতে বর্তমান কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারে ইসির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এটিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুতর নেতিবাচক একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বেশির ভাগের পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়ার কথা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ১৫০টি পর্যন্ত আসনে ইভিএম ব্যবহারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে হবে। এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে ইভিএম ব্যবহারের রাজনৈতিক, আর্থিক এবং কারিগরি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে ইভিএম ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য প্রাপ্তি ও ঝুঁকির বিষয়গুলো দেশবাসীর সামনে স্বচ্ছতার সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।

দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে এমন সমালোচনা-আলোচনার মধ্যেই নতুন ইভিএম সংগ্রহের কাজ শেষ করতে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সরকারের সায় পেলে ভোটের আগে সব কেনাকাটা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কাজ সম্ভব হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close