দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

দুদকের মুখোমুখি পাপুলের স্ত্রী ও শ্যালিকা, টানা দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মানবপাচারের মামলায় কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার সকাল ১০টার দিকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও তার বোন জেসমিন ইসলাম

পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগকে তার স্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তবে দুদক সচিব বলছেন, যাচাই-বাছাই করেই তারা অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছেন।

মানবপাচার ও মুদ্রাপাচার মামলায় প্রায় দেড়মাস ধরে কুয়েতের কারাগারে লক্ষীপুর দুই আসনের সংসদ সদস্য কাজী মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল।

এর আগে গত ২২ জুন একই অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।

গত ১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দিয়েছে দুদক।

পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তারের পর, বাংলাদেশের সিআইডিও মানবপাচারের অভিযোগে তদন্তে নামে। আর অর্থপাচার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিসহ অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সম্প্রতি সংস্থাটির কাছে ১৭৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ জমা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, কুয়েতে মানবপাচার করে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন পাপুল। এছাড়া তার স্ত্রী, সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে।

এসব অভিযোগে দুদকের তলবে বুধবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধান। টানা দুই ঘণ্টা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন। এ সময় তাদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেয়া হয়। এছাড়া পাপুল, তার স্ত্রী, সন্তান, শ্যালিকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, গাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। পরে তারা দুদকে নথিপত্র জমা দেয়ার আশ্বাস দেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম দাবি করেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই দুর্নীতির এই অভিযোগ। তিনি বলেন, কুয়েতে পাপুলের প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দেশের বহু শ্রমিক; কোটি কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। সেখানে একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে কুয়েতে তিনি সমস্যার সন্মুখীন হয়েছেন। মূলত পাপুল ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এসব করা হচ্ছে।’

অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে দুদকের কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। আমাদের কোনো গোপন সম্পদ নেই, অবৈধ সম্পদও নেই। যা আছে তার বিবরণ দুদককে দিয়েছি। আমরা আইনের পক্ষে। এই তদন্তে দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’ পাপুল কুয়েতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসবেন বলেও আশা করছেন তার স্ত্রী।

তবে দুদক সচিব দিলোয়ার বখত বলছেন, পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট। অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মাসেই তারা পাপুলের আরো কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close