খেলাধুলা

দেশে কাবাডিতে বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখেন হাবিবুর রহমান

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে খেলাটির নাম কাবাডি। কাবাডি বোদ্ধারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ফরিদপুর অথবা ভারতের তামিলনাড়ুতেই এ খেলার উৎপত্তি। তামিল শব্দ ‘কাই’ অর্থ হাত আর ‘পিডি’ অর্থ ধরা অর্থাৎ কাইপিডি (হাত ধরা); এর থেকেই এসেছে কাবাডি। দেশের বাইরে ২০১৮ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশের ছেলেরা। সেই দলের সবাই এখন বিভিন্ন সার্ভিসেস দলে খেলছেন এটাই একটা বড় সফলতা বলে জানালেন বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান।

২০২১ সালের মার্চে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর মার্চেও একই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। এরই মধ্যে কাজে লেগে পড়েছে দেশের জাতীয় খেলার নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

করোনার কারণে প্রথম আসর ছোট পরিসরে সারলেও এবার আরো বড় করেই জাতির পিতার নামের এই টুর্নামেন্ট করার পরিকল্পনা করেছে ফেডারেশন। এরই মধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ১৫টি দেশকে। এতে পাকিস্তান, পোল্যান্ড, কেনিয়া, মিসর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে বলে জানান কাবাডির সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, আমরা গত বছর বঙ্গবন্ধু কাপ টুর্নামেন্টে জিতেছি। যা আমাদের কাবাডিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এবার আরো বড় পরিসরে টুর্নামেন্টটি করতে যাচ্ছি।

দেশের ৬৪ জেলাকে ৮টি অঞ্চলে ভাগ করে অঞ্চল ভিত্তিক খেলা শেষ করে সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে ঢাকায় এনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইজিপি কাপ জাতীয় যুব কাবাডির চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। যেখানে পুরুষ বিভাগে চট্টগ্রাম জেলাকে পরাজিত করে মৌলভীবাজার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঝিনাইদহ জেলা। রানার আপ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে নড়াইল জেলা।

দারুণ সাড়া জাগানো এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার প্রত্যাশা ফেডারেশনের। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথাও জানালেন ফেডারেশনের এ কর্মকর্তা। তিনি জানান, করা হবে দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন ক্যাম্প। প্রয়োজনে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে বিদেশে।

এ প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলনের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, নতুন খেলোয়াড় যারা উঠে আসছে, তাদের নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেব। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করব। আমরা মূলত ৫-১০ বছরের জন্য পরিকল্পনা নেব।

১৯৮০ সালে এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে ভারতের বিপক্ষে হেরে রানার আপ হয়ে রূপা জিতেছিল বাংলাদেশ। পরের আসরেও রূপা ধরে রেখেছিল বাংলার ছেলেরা। শেষবার ২০০৬ সালে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদকের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আর কোনো পদকের ছোঁয়া পায়নি বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দল।

তবে চলতি বছর চীনের হ্যাংঝুতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান গেমসে হারানো রূপা পুনরুদ্ধারের আশা কাবাডির সাধারণ সম্পাদকের। প্রস্তুতিও সেভাবে এগোচ্ছে জানালেন তিনি।

গত বছর যুব কাবাডি বিশ্বকাপ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে যায়। এ বছর ফের এই টুর্নামেন্টটি হওয়ার কথা। রয়েছে বাংলাদেশের আয়োজক হওয়ার সম্ভাবনাও।

কাবাডিতে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান। ক্রিকেটের মতো কাবাডিতেও চালু করতে যাচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। ছয় দল নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে প্রথম আসর। এরই মধ্যে ছয়টি দল ঠিক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খেলা হিসেবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ক্রিকেট অনেক উপরে। তবে কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা। যা দিয়েই শুরু হয় শৈশব। ভারতে ছয়টি অঞ্চলে লিগ অনুযায়ী হয় এ খেলা। অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সব থেকে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ । এবার বাংলাদেশও সে পথে হাঁটতে যাচ্ছে। এ বছরের প্রথম দিকেই আমরা ছয় দল নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছি কাবাডি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। এরই মধ্যে ছয় দলের সঙ্গে কথাও চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু সঠিক একটা সময়ের অপেক্ষা। জাতীয় খেলা হিসেবে কাবাডির ঐতিহ্য ফেরাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর ভবিষ্যতেও যাব।

ক্রীড়া সংগঠক, বোদ্ধা, সাবেক খেলোয়াড়, ক্রীড়া সাংবাদিকদের নিয়ে সেমিনার করেই দীর্ঘমেয়াদী ৫ বা ১০ বছরের জন্য কাবাডি নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনাও করা হবে বলে জানান হাবিবুর রহমান।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close