দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

দেশে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য চালু হয়েছে মাদ্রাসা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে একটি মাদ্রাসা চালু হয়েছে। ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা’টি এই সম্প্রদায়ের জন্য দেশের প্রথম কোনো আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজের ঢাল এলাকায় তিনতলা একটি ভাড়া বাড়িতে এই মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাড়িটির ওপর তলায় ১২০০ বর্গফুট জায়গায় নিয়ে করা প্রতিষ্ঠানটিতে শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ নিতে পারবেন। অনাবাসিক এই মাদ্রাসায় যেকোনো বয়সী হিজড়া ভর্তি হতে পারবেন।

শুক্রবার মাদ্রাসাটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ ও বাড্ডা এলাকার ৪০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ অংশ নেন। তাদের মধ্যে যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলের হাজী মসজিদ এলাকা থেকেই এসেছেন অন্তত ১৮ জন।

২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করা হয়।

দুই পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকালে বাংলাদেশ হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু প্রধান অতিথি ছিলেন। বিকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরাঙ্গীরচরের বাইতুল উলূম ঢালকানগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি জাফর আহমাদ।

পরের বছর ভোটার নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়নের সময়ই নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন ফরমে লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে হিজড়া যুক্ত করে। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন।

কামরাঙ্গীরচরে তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসাটির অর্থায়ন করছে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী ফাউন্ডেশন। এর অধ্যক্ষ পরিচালক মুফতি আবদুর রহমান আজাদ নিজেও অন্যতম একজন উদ্যোক্তা।

মুফতি আজাদ বলেন, এই মাদ্রাসায় প্রথমে হিজড়াদেরকে কুরআন শিক্ষা দেওয়া হবে। এছাড়া কওমি শিক্ষা সিলেবাস অনুসারে নূরানী, নাজেরা, হিফজুল কুরআন ও কিতাব বিভাগ চালু হবে। শুক্রবার থেকেই তাদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

পরবর্তিতে এখানে হিজড়াদেরকে কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি আলাদা বিভাগ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

হিজড়াদের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বলেন মুফতি আজাদ।মাদ্রারাসাটিতে ১০ জন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান এই শিক্ষক।

বিক্রমপুর এলাকার সন্তান ২৭ বছর বয়সী নিশি বলেন, খুব ছোট বেলায় স্কুলে গিয়েছি। তখন কিছুদিন মক্তবেও গিয়েছি। যখন আমাকে হিজড়া বলে সবাই জানতে পারল তখন থেকে আমাকে আর কেউ স্কুল-মাদ্রাসায় ঢুকতে দেয়নি। ৫/৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে। এতো বছর পর আমি আবার মাদ্রাসায় এসেছি। এটা আমার কাছে অনেক বড় আনন্দের বিষয়।”

নিশি জানান, তার পার্লার ও সেলাইয়ের ভালো লাগে। সুযোগ পেলে এই কাজে যোগ দিতে চান তিনি।

আরেক হিজড়া দুলালী বলেন, আমি কোনো একটা কিছুতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানের প্রবেশ করতে চাই। এটা হলে সবচেয়ে ভালো লাগত। ঘুরে ঘুরে জীবনধারণের দরকার হত না।”

নিশি ও দুলালী জানান, মাতুয়াইলের হাজী মজসিদ এলাকার হিজড়া রজনীর বাড়িতে তাদের সম্প্রদায়ের অন্তত ৪০ জন বসবাস করেন। তারা কেউই কোনো কর্মসংস্থানে সাথে যুক্ত নন। সুযোগ পেলে তারা কাজ করতে চান।

অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার প্রশিক্ষক আবদুল আজিজ হুসাইনী বলেন, “আজকের দিনটি বিশ্বের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার জানা মতে, তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের জন্য কোথাও আলাদা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এটাই প্রথম।”

এরা সমাজে অবহেলিত, নানা বিষয়ে তারা বঞ্চিত। এমনকি তারা কোনো মসজিদে গিয়েও নামাজ পড়তে পারে না। তাদেরকে এখানে কুরআন শিক্ষা দেওয়া হবে। পরবর্তিতে কারিগরী শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

এর আগে গত ছয় মাস ধরে ঢাকার যেসব এলাকায় হিজড়ারা বসবাস করেন এমন আট জায়গায় গিয়ে তাদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া শুরু করা হয় বলে জানান তিনি।

হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু বলেন, “হিজড়ারা যদি সার্বিক সহযোগিতা পায় তাহলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে। তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কাজের সুযোগ দিতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কিছু করতে যাবে না। অপরাধ কমে আসবে।”

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close