প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন

সাভারে খলনায়কের পশু-পাখির খামার

রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: মহাসড়ক ছেড়ে শাখা সড়ক ধরে কিছুদুর গেলেই চোখে পড়বে রাজকীয় ফটক। না ভিতরে কোন সাড়া শব্দ শোনা যায় না। কড়া নড়লে ভিতর থেকে কেউ একজন ফটকের ছোট ছিদ্র দিয়ে প্রশ্ন করে। কে? কার কাছে যাবেন? তারপর, ঢুকে একটু সামনে যেতেই পিচঢালা বাড়ির আঙ্গিনায় গরুর খামার। পাশে সাজিয়ে রাখা নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশী পাখি। আর উপরে কবুতরের বাসা। এমন পরিবেশ ঘিরে পাহাদারের মতো দাড়িয়ে আছে সবুজ গাছ আর বড় বড় রাজকীয় অট্টলিকা। তার মাঝ খানে এমন পশু-পাখির সাজানো গোছানো খামার এক নজরেই দৃষ্টি কাড়বে।

আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরও কিছু ভবন। সবুজ গাছের সঙ্গে শত শত পাখি-কবুতরের ঝাঁক। আবার গরুর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

ছবি: নিজের খামারে ডিপজল।

সাভারের রাজফুলবাড়িয়ার বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে একটু সামনে গেলেই কারুকার্যে পূর্ণ বাড়ি দেখলে মনে হয় কোন রিসোর্ট। আবার খামার দেখলে মনে হয় কোন পেশাদার পশু খামারীর বাড়ি। এ কেমন বাড়ি? প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। এমন বাড়ির মালিক বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা খলনায়ক ডিপজলের পরিবার। পরিবার সমেত এ বাড়িতেই বাস করেন ডিপজল।

পর্দার ভয়ঙ্কর ডিপজলের মনে পশুপাখির জন্য এত দরদ! কারণ এত বড় খামার শুধু বাড়িতেই নয়। আরো কয়েকটি খামার আছে সাভারের কয়েকটি স্থানে। এ খামারগুলো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, একেবারে শখের বশেই গড়ে তুলেছেন ডিপজল।

ঘুরে দেখা মেলে, বিভিন্ন দেশের ও জাতের প্রায় ৭-৮ হাজার কবুতর। বিভিন্ন দেশের কবুতর যেমন পাংখি, আর্মি, রাণী, ময়না, জুটপরী, ন্যাপটা, সাফটিলা, চিলা, খাকী, গররাসহ অন্যান্য জাতের কবুতর। কবুতরগুলো যখন দলবেঁধে পাখামেলে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়, তখন দেখতে সত্যিই চমৎকার লাগে। কবুতর খামার দেখার জন্য রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

ছবি: দেশি-বিদেশী বাহারী পাখি।

বাড়ীর আঙ্গিনায় রয়েছে একটি বড় গরুর খামারও। সেখানে বিভিন্ন জাতের গরু যেমন জার্সি, রানী, ফ্রিজিয়াম, ব্রাহামা, সিন্ধী, ভুট্টি সহ নানা জাতের গরু রয়েছে। গরু হতে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ লিটার দূধ পাওয়া যায়। যার এক লিটার দুধও বাইরে বিক্রি করা হয়না, দুধ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ডিপজল নিজেই খান। উল্লেখ্য, এই গরুর খামার ছাড়াও ডিপজলের একাধিক গরুর খামার রয়েছে বিভিন্ন স্থানে।

ছবি: ঢাকা অর্থনীতি

কবুতর ও গরু পালনের পাশাপাশি তিনি একজন খাঁটি প্রকৃতি প্রেমিকও বটে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের ও নানা জাতের পাখির কিচিরমিচিরে পরিপূর্ণ বাগান দেখে।

বিভিন্ন প্রকারের পাখির মধ্যে আছে কাইশাপাখি, লরী, কাকাতোয়া, গ্রে-প্যারট, টিয়া, সেনেগাল, বাজীগরসহ নানাজাতের পাখি। কবুতর, গরু, পাখির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন জাতের ছাগল দুম্বা ও ভেড়ার খামার।

নিজের খামার নিয়ে ডিপজল বলেন, আমি পাখি, কবুতর, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু পালি শখে। লাভের চিন্তা করতে গেলে পশুপাখি কষ্ট পায়, কারণ তখন তাদের খাবার কম দেয়া হয়। আর মন থেকে পাললে তাদের পেছনে খরচও একটু বেশি হয়, তারা ভালো খাবার পায়।

ছবি: ঢাকা অর্থনীতি

নতুন খামারীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ভালো ভাবে চর্চা করলে লাভবান হওয়া যায় এই পেশা থেকে। যে কেউ এটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন।

১৯৫৮ সালের ১৫ জুনে ঢাকার মিরপুরের বাগবাড়িতে জন্ম নেয়া ডিপজলের বাংলা সিনেমায় আগমন হয় পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবরের হাত ধরে। তার প্রথম ছবি ‘টাকার পাহাড়’।

কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘তেজী’ ছবিতে তিনি প্রথম ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই ছবি রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয়। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, ডিপজল মানেই ছবি হিট। টানা কয়েক বছর ভিলেন হিসেবে দাপটের সঙ্গে অভিনয়ের পর বিরতি নেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close