বিশ্বজুড়ে

পাকিস্তানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির তীব্র সংকট

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: পাকিস্তানের বিদ্যুৎ–সংকট ক্রমশ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার বিষয়টি উঠে এসেছে। গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পাকিস্তান এলএনজি লিমিটেড টানা তিনবারের মতো প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য চুক্তি করতে পারেনি। পাকিস্তানের জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি ক্রয় করতে দেশটির অক্ষমতা বিদ্যুতের ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এরই মধ্যে পাকিস্তান সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য কাজের সময় সংক্ষিপ্ত করার পাশাপাশি করাচি ও অন্যান্য শহরের শপিং মল ও কারখানাগুলো তাড়াতাড়ি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেবে, এমন আশঙ্কার মধ্যে ইউরোপ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে। এতে বেড়ে গেছে এলএনজির দাম।

আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখে শঙ্কিত। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য যাবতীয় চেষ্টা করছে শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান সরকার। উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে করুণ আর্থিক পরিস্থিতি সামলাতে পাকিস্তানের সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ মাসেই দেশটির রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যে পরিমাণ অর্থ পাকিস্তানের রিজার্ভে মজুত আছে, তা দিয়ে মোট দুই মাসের আমদানি ব্যয় বহন করা সম্ভব। এ অবস্থায় দেশটিতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।

ডন–এর খবরে বলা হয়, শাহবাজ সরকার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বৃহৎ শিল্প ও যাঁদের আয় বেশি, তাঁদের ওপর ‘সুপার ট্যাক্স’ আরোপ করেছে। বৃহৎ শিল্পগুলোর ওপর ১০ শতাংশ সুপার ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। আর যাঁদের বার্ষিক আয় ১৫ কোটি রুপির বেশি, তাঁদের ১-৪ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত কর দিতে হবে। শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বৃহৎ শিল্পগুলোর ওপর ১০ শতাংশ সুপার ট্যাক্স আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে দেশের দরিদ্রদের সহায়তার জন্য রাজস্ব বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহৎ শিল্প বিবেচনায় সিমেন্ট, ইস্পাত, চিনি, তেল-গ্যাস, সার, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, পোশাক, ব্যাংক, গাড়ি, সিগারেট, কোমল পানীয়, রাসায়নিক ও উড়োজাহাজ ১০ শতাংশ সুপার ট্যাক্সের আওতায় আসছে।

ধনীদের ওপর আরোপ করা করকে ‘দারিদ্র্য বিমোচন কর’ বলা হচ্ছে। বার্ষিক আয় ১৫ কোটি রুপির বেশি হলে ১ শতাংশ, ২০ কোটির বেশি হলে ২ শতাংশ, ২৫ কোটির বেশি হলে ৩ শতাংশ ও ৩০ কোটির বেশি হলে ৪ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হবে। টুইটে অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেন, সব খাতে ৪ শতাংশ সুপার ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।

শাহবাজ শরিফ বলেন, জনগণকে সংকটে ফেলে সরে যাওয়া এবং অন্যদের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন সহজ ছিল। কিন্তু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সরকার দ্বিতীয় বিকল্পটিই গ্রহণ করেছে।

কঠিন সময়ে দরিদ্রদেরই বেশি ভুগতে হয় উল্লেখ করে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আজ সামর্থ্যবানদের তাঁদের দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে। এখন তাঁদের নিঃস্বার্থ প্রমাণের সময় এসেছে। আমি আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের দায়িত্ব তাঁরা পুরোপুরি পালন করবেন।’

ঋণে জর্জর পাকিস্তানের রিজার্ভে টান পড়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণ প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। ঋণ পেতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় সংকোচন ও বাজেট ঘাটতি কমাতে বাড়তি করারোপের মতো শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল শুক্রবার বলেছেন, চীনা ব্যাংকগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম থেকে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close