জীবন-যাপন

প্লেনে উঠতে ভয়!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বিমানে ভ্রমণে অনেকেই কমবেশি উদ্বিগ্ন বা শঙ্কিত হন। যান্ত্রিক ডানায় ভর করে বহু দূরের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মনের মধ্যে উঁকি দেয় যে প্রশ্নটি তা হলো, মাঝ আকাশে ইঞ্জিন নষ্ট হলে বা অন্য কোনো বিপত্তি ঘটলে, কী উপায় হবে? আকাশভ্রমণে এমন ভয়কে বলা হয় ‘অ্যারোফোবিয়া’ বা ‘অ্যাভিওফোবিয়া’। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিমান যাত্রীদের মধ্যে এমন ফোবিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। অথচ অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে উড়োজাহাজে ভ্রমণ সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঘর থেকে ১ কিলোমিটার অর্থাৎ এক মাইলের কম দূরত্বে বিমানবন্দরে যেতে প্রাণহানির যে ঝুঁকি থাকে, তা উড়োজাহাজে ভ্রমণের ঝুঁকি থেকে ৭২ গুণ বেশি। এ ছাড়া খাদ্যে বিষক্রিয়ায় বেঘোরে প্রাণ হারানোর ঝুঁকিও আকাশভ্রমণের চেয়ে ৩ গুণ বেশি। তাই নির্দ্বিধায় বলা চলে, লটারি জিতে কোটিপতি হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু, বিমান যাত্রায় জীবননাশের আশঙ্কা এর চেয়েও কম।

তবে বিমানে ভ্রমণ ‘শূন্য ঝুঁকি’ বা শতভাগ নিরাপদ, সেটা মোটেও বলা যাবে না। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে বিমান ভ্রমণকালে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের হিসাব রাখা হচ্ছে। সে বছর প্রাণহানি ঘটেছিল ৯০৫ জনের। ৯৪৩ জনের প্রাণনাশের ঘটনায় ২০১০ সাল ছিল বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য কালো একটি বছর। তবে সবাইকে বিস্মিত করে ২০১৭ সালে এ সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ৫৯-এ (সূত্র: স্টাটিস্টা ২০২৩)। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে গড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ। অর্থাৎ প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ মানুষ। বিভিন্ন সময় পাইলটদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতার কারণে বেশ কিছু বিমান দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল।

সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৩৮০-এর পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন ট্যামি জো শল্টস। নিউইয়র্ক থেকে ডালাস যাওয়ার সময় বোয়িং ৭৩৭-এর ইঞ্জিনের ফ্যানের একটি ব্লেড ভেঙে গিয়ে বিমানের জানালায় তীব্র বেগে আঘাত হানে। চলন্ত বিমানটির জানালার কাচ ভেঙে যায়। ফলে হঠাৎ করেই বিমানের মধ্যে বাতাসের চাপ দ্রুত কমে যায়। প্রচণ্ড বাতাসের টানে একজন যাত্রী উড়ে গিয়ে প্রাণ হারায়। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ক্যাপ্টেন ট্যামি মোটেই বিচলিত না হয়ে একদম ঠান্ডা মাথায় বিশাল বিমানটিকে ফিলাডেলফিয়াতে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর সাহসিকতা ও সঠিক সময়ে নির্ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ১৪৮ জন যাত্রীর প্রাণ রক্ষা পায়। ট্যামি জো শল্টসের আরেকটি পরিচয় আছে, তিনি ছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর প্রথম নারী লড়াকু পাইলটদের একজন।

আসলে পৃথিবীর কোথাও কোনো যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, সে খবর বিদ্যুতের গতিতে প্রচার পায়। কারণ, উড়োজাহাজের ইতিহাস এক শতাব্দী পার করলেও বাহনটি নিয়ে মানুষের বিস্ময় আজও কাটেনি।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close