প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন

প্রজাপতির সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছদ্মবেশ (ভিডিও)

নাহিদ হাসান শুভঃ ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো রঙিন প্রজাপতির প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জুড়ি নেই। মাত্র অল্প কিছুদিনের জীবন চক্রের প্রজাপতি সম্বন্ধে মজার ও আকর্ষণীয় অনেক তথ্য রয়েছে, না জানা থাকলে যেগুলো আপনাকে সম্ভবত মুগ্ধ করবে পতঙ্গটির রূপের মতোই। পা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ, কাঁদা থেকে পানি পান কিংবা আত্মরক্ষার জন্য ছদ্মবেশের কৌশল ইত্যাদি, সবমিলিয়ে সৌন্দর্যের বাইরেও পতঙ্গটির জীবন দারুণ মনোমুগ্ধকর। না টেনে দেখতে থাকুন পুরো ভিডিওটি, জানুন প্রজাপতি সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য-

প্রজাপতির খাবার খোঁজা বা গ্রহণের ব্যাপারে তাদের পায়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনিন্দ্যসুন্দর এই পতঙ্গগুলো খাদ্যের স্বাদ নেয় তাদের পায়ের মাধ্যমে। খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করার যে রিসেপ্টর, তা থাকে প্রজাপতির পায়ে। তাছাড়া, নারী প্রজাপতিরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে ঘুরে বেড়ায় এবং পা দিয়ে গাছের নির্দিষ্ট অংশে আঘাত করতে থাকে। এরপর ঐ গাছের নিঃসরিত রস পায়ের কেমোরিসেপ্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা করে তারা। যদি তাদের নির্ধারিত মানের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়, তাহলে সেখানে ডিম দেয় তারা।

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এজন্য যে, জন্মের পর প্রজাপতির লার্ভা যেন এই গাছ বা গাছের পাতা থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান পায়। এভাবেই পায়ের মাধ্যমে আদর্শ খাবার বা ডিম দেওয়ার জায়গা খুঁজে বেড়ায় প্রজাপতিরা।

প্রকৃতির সবচেয়ে রঙিন পতঙ্গ প্রজাপতি। নানা রঙে রাঙানো প্রজাপতির ডানা তাদের মূল সৌন্দর্যের আধার। রঙিন এই ডানাগুলো মূলত কাইটিন নামের একধরনের প্রোটিনের স্তর দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত পাতলা। এই কাইটিনের ডানার উপরে থাকে হাজার হাজার তন্তু বা আঁশ, যেখানে আলোর কারুকার্যে আমরা শত রঙে রাঙানো প্রজাপতির দেখা পাই। বয়স বৃদ্ধির সাথে এই আঁশগুলো যখন ঝরে যায়, তখন শুধু থেকে যায় কাইটিনের তৈরি ডানা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই ডানাগুলো একদম স্বচ্ছ এবং এক পাশ থেকে অন্য পাশে সহজেই দেখা যাচ্ছে।

প্রকৃতির সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রজাপতি সাধারণত খুব বেশিদিন বাঁচে না। পূর্ণবয়স্ক একটি প্রজাপতির জীবন মাত্র ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। প্রজাপতির জীবন চক্রের চারটি ধাপ- ডিম, লার্ভা, পিউপা বা ক্রিসালিস এবং প্রজাপতিতে পরিণত হওয়া।ক্রিসালিস থেকে অবমুক্ত হওয়ার পরই পাওয়া যায় পূর্ণবয়স্ক প্রজাপতি। এরপর প্রজাপতিরা এদের সমস্ত শক্তির বড় অংশ ব্যয় করে খাওয়া ও বংশবিস্তারের উপর। বেশিরভাগ প্রজাপতি মাত্র এক বা দুই সপ্তাহ বেঁচে থাকে। অল্প কিছু প্রজাপতির প্রজাতি অবশ্য রয়েছে, যেগুলোর জীবনকাল প্রায় ১৮ মাস।

প্রজাপতির নিজের জন্য দরকারি তাপমাত্রা উৎপন্ন করতে পারে না। কারণ, এরা শীতল রক্তের পতঙ্গ। তাই, এদের জীবনচক্রের উপর আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রার প্রভাব লক্ষ্যণীয়। প্রজাপতির বাসস্থানের তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে এদের শরীরের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করে এবং একসময় আর ডানা মেলে উড়তে পারে না।

খাদ্য শৃঙ্খলার নিচের দিকের প্রাণী হওয়ায়, পাখি, মাকড়শা, টিকটিকি ও অন্যান্য আরও অনেক প্রাণীর খাদ্য তালিকাতেই প্রজাপতি রয়েছে। আত্মরক্ষার অন্য তেমন কোনো শক্তিশালী উপায় না থাকায় ক্ষুধার্ত শিকারির হাত থেকে বাঁচতে প্রজাপতির সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছদ্মবেশ। ডানার রঙ ও নকশার সাথে মিলিয়ে আশ্রয়স্থল নির্ণয় করতে পারলে সহজেই শিকারের নজর এড়িয়ে যেতে পারে এরা।অবশ্য কিছু প্রজাপতি আবার ছদ্মবেশের ঠিক বিপরীত কৌশল অবলম্বন করে। অত্যন্ত কড়া রঙের নকশার মাধ্যমে এরা নিজেদের উপস্থিতি একরকম সগৌরবের ঘোষণা করে বেড়ায়। অত্যন্ত রঙিন কিছু পতঙ্গ বিষাক্ত হওয়ায় শিকারি প্রাণীগুলো এদের এড়িয়ে চলে, আর এ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে কিছু প্রজাপতি। প্রজাপতিরা বিষাক্ত নয়, তবে বিষাক্ত পতঙ্গের নকশার গড়নে কিছু প্রজাপতির ডানা রাঙানো থাকলে তা আত্মরক্ষায় বেশ কাজে দেয়।

ভিডিও দেখুনঃ

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close