প্রধান শিরোনামরাজস্বশিল্প-বানিজ্য

প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস (জুলাই) শুরু হয়েছিল রাজস্ব ঘাটতি দিয়ে। অর্থবছরের প্রথমেই লক্ষ্যের চেয়ে ৭ হাজার ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কম আদায় হয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৩৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বিপরীতে প্রথম মাসে আদায় হয়েছিল ১২ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

এদিকে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেও ঘাটতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ৫ মাস (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা হলেও আদায় হয়েছে ৮৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায়ে উচ্চবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাবসহ নানা কারণে চলতি বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব না।

দেশের রাজস্ব খাতের ৮৬ শতাংশ আহরণ করে এনবিআর। মূলত আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস— এই তিন খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়।

আয়কর ও ভ্রমণ খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রথম ৫ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৯৩৩ কোটি। অর্থাৎ এ খাতে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা।

একইভাবে কাস্টমসে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ৩৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ঘাটতি ১০ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। আর বছরজুড়ে এ খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

ভ্যাটে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ১০ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এই খাতে ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। আর বছরজুড়ে এ খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে আমদানি-রফতানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রফতানির স্থবিরতায় কমেছে রাজস্ব আদায়। রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া ডিজিটাল না হওয়ায় অনেকেই করমুখী হচ্ছে না। কর আদায়ে অটোমেশন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।

রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের এক হাজারের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানো, অটোমেশন এবং আইন পরিবর্তনসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

চলতি বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে অযৌক্তিক দাবি করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বিগত অর্থবছরে যা আদায় করতে পেরেছি তার ওপর একটা সার্টেইন পার্সেন্টেজ বৃদ্ধি করে টার্গেট সেইভাবে বানানো উচিত। এই টার্গেটা ঠিক করবে এনবিআর। সেটা তারা সরকারকে দেবে, সরকার সেই অনুযায়ী বাজেট বানাবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। করোনা ও অর্থনীতির দুর্দশা বিবেচনায় না নিয়ে এনবিআরের ওপর অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই এমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না। এটা যেহেতু অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে করা হয়নি সেহেতু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাস্তব অর্জনের বিরাট একটা পাথর্ক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। করোনা যদি না যায়, অর্থনীতি যদি সচল না হয় তাহলে কর আদায়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না। এমনকি এ বছর যদি করোনা না থাকতো তাহলেও এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতো না। সূত্রঃ (জাগো নিউজ)

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close