প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে

প্রেসিডেন্টরা রাজা নন, ট্রাম্পকে মার্কিন বিচারপতি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘প্রেসিডেন্টরা রাজা নন’। অবশ্য এই বাক্যটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঠিক পছন্দ হওয়ার কথা নয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর কর্মকাণ্ড অন্তত সে কথাই বলছে। আর তাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কথাটি মনে করিয়ে দিতে বাধ্য হলেন ফেডারেল বিচারপতি। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের সাবেক উপদেষ্টা ডন ম্যাকগানের সাক্ষ্য চেয়ে ডেমোক্র্যাটদের করা মামলার রায়ে ফেডারেল বিচারপতি কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন এ কথা বলেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের সাবেক উপদেষ্টা ডন ম্যাকগানের সাক্ষ্য চেয়ে হাউস ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। ওই মামলার নিষ্পত্তিতে ফেডারেল আদালত হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্সির তীব্র সমালোচনা করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিক্রম করে গেছেন আগেই। তিনি শুধু প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের ক্ষমতার বলয় অন্যায়ভাবে বাড়াননি, সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিতেও তাঁর ব্যক্তিগত নানা আচরণ সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ, নিজের আর্থিক তথ্য গোপন করা, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে নিযুক্ত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় এবং নিজেকে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা—এই সব বিষয়ই এখন আলোচনায় উঠে আসছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা কার্যকলাপের কারণে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিসর নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই প্রশ্নটিই ডেমোক্র্যাটরা উত্থাপন করেন আদালতে, যেখানে তারা জয়ী হয়েছে বলা যায়। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রশ্নে হোয়াইট হাউস আইনি পরাজয় স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের সামনে নতুন করে হাজির হয়েছে বেশ কয়েকটি আইনি লড়াই। এগুলো নিয়েই এখন তাদের ব্যস্ত থাকতে হবে।

হোয়াইট হাউসের সাবেক উপদেষ্টা ডন ম্যাকগানের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য গত এপ্রিল থেকেই চেষ্টা করছে প্রতিনিধি পরিষদ। কিন্তু তিনি সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। মূলত রবার্ট ম্যুলার তদন্ত প্রতিবেদনে দেওয়া ইঙ্গিত, যেখানে রুশ-সংশ্লিষ্টতা তদন্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাধা সৃষ্টি করেছিলেন কিনা, সে বিষয়েই ম্যাকগানের কাছ থেকে সাক্ষ্য চাওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন এ ধরনের সাক্ষ্য গ্রহণেও বাধা সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট সরাসরি দাবি করেন যে, ম্যাকগান দায়মুক্তির আওতায় পড়েন। কিন্তু গতকাল সোমবার মামলার নিষ্পত্তিতে বিচারপতি জ্যাকসন প্রেসিডেন্টের এ দাবি খারিজ করে দেন।

আদালতে বিচারপতি জ্যাকসন মার্কিন জাতির পিতাদের উদ্ধৃত করে প্রেসিডেন্সির ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমেরিকার আড়াই শ বছরের ইতিহাস এই সত্যের সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, প্রেসিডেন্টরা রাজা নন।’ এরপর জ্যাকসন বলেন, ‘এটা তর্কাতীত যে, হোয়াইট হাউসের সাবেক ও বর্তমান সব কর্মী যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য কাজ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং একই সঙ্গে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে শপথ নিয়েছেন।’

ফেডারেল আদালতের দেওয়া এ আদেশের বিরুদ্ধে বিচার মন্ত্রণালয় আপিল করবে বলে জানিয়েছে। বিষয়টিকে হোয়াইট হাউস চলমান অভিশংসন তদন্তের সঙ্গে যুক্ত করে বিবেচনা করছে। অভিশংসন তদন্তে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেবেন বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। অবশ্য তাঁর এ অবস্থান নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। আবারও প্রশ্ন উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আসলে কত?

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close