প্রধান শিরোনামস্বাস্থ্য

বাংলাদেশে করোনার টেস্ট কিট তৈরি করেছে গণস্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০১৯ সালের নভেম্বরে চায়নার উহানে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। এ ভাইরাসের টেস্ট কিট উৎপাদনের জন্য এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কাজ শুরু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

করোনা ভাইরাস ডায়াগনোসিস করার একটি পদ্ধতির নাম হল রিভার্স ট্রান্সকিপশন পলিমারেজ চেইন (Reverse transcription polymerase chain reaction—rRT-PCR)।

বাংলাদেশে এই ধরণের সিস্টেমে ডায়াগনোসিস করার পদ্ধতি খুব কষ্টসাধ্য। কারণ এর জন্য খুব দক্ষ জনবল এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যাব প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে ডায়াগনোসিস করতে কয়েক ঘন্টা থেকে দু’দিন পর্যন্ত সময় লাগে।

এছাড়া আরেকটি ডায়াগনোসিস করার পদ্ধতির নাম এন্টিবোডি এ্যাসে (IgA,IgG and IgM immunoassay)। এই পদ্ধতিতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডায়াগনোসিস করা সম্ভব।

করোনার আগের রূপ SARS-COV-2 নভেম্বর ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮৪ বারের বেশি তার জিনের গঠন পরিবর্তন করেছে। নতুন স্থানে নতুন পরিবেশে টিকে থাকতে এ ভাইরাস তার জিনের গঠন পরিবর্তন করে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশ তাদের প্রয়োজনে করোনা ভাইরাসের কিট তৈরী করলেও বাংলাদেশে এমন কাজ অন্য কেউ এখনো করেনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য-আরএনএবায়োটেক লিমিটেড বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোভিড-১৯ এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য পিওসি (POC-point-of care) কিট ডেভেলপ করার চেষ্টা করে আসছে।

গণস্বাস্থ্যের সুদক্ষ টিম এই কিটের ডিজাইন এবং উৎপাদন করার কাজ করছে। এর আগে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের ডায়াগনোসিস কিট (SARSPOC kit) তৈরীর সময় সিঙ্গাপুরে কাজ করেছেন ড. বিজন কুমার শীল। তিনিই গণস্বাস্থ্যের এই টিমের অধিনায়কত্ব করছেন।

এই কিট তৈরীর জন্য বিএসএল টু প্লাস(BSL 2+) ল্যাব তৈরীর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর জন্যে রিএজেন্ট এবং ইকুইপমেন্টও যোগাড় করা হচ্ছে। গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেকের পক্ষে এ তথ্য নিশ্চিত করেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার।

যে পদ্ধতিতে এই কিট তৈরি করা হবে তাকে বলা হয় ‘ডট ব্লট টেকনোলজি’। এই কিট কিভাবে নতুন করোনা ভাইরাস শনাক্ত করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে এই কিটে ভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। এর জন্য স্পুটাম নেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমে সন্দেহজনক ব্যক্তির রক্তের নমুনা নেওয়া হবে। সেই রক্ত থেকে ‘সিরাম’ আলাদা করতে হবে। কিটে সেই সিরাম রেখে তার ওপর এন্টিজেনের বিক্রিয়া ঘটানো হবে।

যদি বিক্রিয়া হয় তাহলে সন্দেহজনক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের প্রাথমিক উপস্থিতি রয়েছে বলে প্রমাণ হবে। বিক্রিয়া না করলে তিনি আক্রান্ত নন বলে বিবেচিত হবে। ইতিমধ্যে এই ডট ব্লট পদ্ধতি ব্যবহার করে চায়না ও আমেরিকাতে কিট তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে।

এই কিট উৎপাদনে কাজ করেছেন ড. বিজন কুমার শিল, ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রঈদ জমির উদ্দিন এবং ড. ফিরোজ আহমেদ।

বর্তমানে আমাদের দেশে যে কিটে নতুন করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়, সেটি মূলত ‘মলিকুলার’ টেস্ট কিট। এই পরীক্ষায় কিটে রোগীর নমুনা দিয়ে একটি মেশিনের মধ্যে রাখতে হয়। ঠিক যে পদ্ধতিতে হেপাটাইট ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ডট ব্লট পদ্ধতিতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট।

ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার জানান, এ ধরনের কিট উৎপাদন করতে হাইটেক ল্যাব প্রয়োজন। ইতোমধ্যে গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক একটি হাইটেক ল্যাব স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পেলেই আমার প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করব। সব মিলিয়ে উৎপাদন করতে আমাদের এক মাস সময়ের প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে আমরা ১০ হাজার ভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এই কিট ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ল্যাবটি ‘তৃতীয় স্তরের’ বায়োসেফটি হতে হবে।

ইতোমধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে অনুমোদনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই এক মাসের মধ্যেই তারা বিপুল পরিমাণে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এই কিট মাত্র ২০০ টাকায় সরবরাহ করতে পারবে। তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনুরোধ রয়েছে সরকার যেন জনসাধারণের কাছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় এই টেস্ট ছড়িয়ে দিতে পারে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close