কৃষিদেশজুড়েশিল্প-বানিজ্য

বাংলাদেশে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ কেন? (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু মাঝে মধ্যেই দেশের শাহাজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমে ধরা পড়ছে। তবু আমদানির চেষ্টা করছে অনেকে । কারণ কি? আর কেনই বা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের এই গরুটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের কার্গো ফ্লাইটে দেশে আসা ব্রাহমা জাতের প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১৮ টি গরু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করে ঢাকা কাস্টমস। এরপর থেকেই আলোচনায় আসা ব্রাহমা গরুর বিষয়টি । তবে  এরআগেও চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রাহমা জাতের ৩০ টি গরু জব্দ করা হয়েছিলো।

এখন জেনে নেই ব্রাহমা জাতের গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো- যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা শুক্রাণু এনে কৃত্রিমভাবে দেশে ২০০৮ সালে প্রথম প্রাণীসম্পদ অধিদফতর ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রাহমা গরু উৎপাদন কর্মসূচি শুরু করে। ১১টি উপজেলায় তিন বছরের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও এখন প্রায় ৫০টি জেলায় চলছে এ কর্মসূচি।

ব্রাহমা গরু মূলত মাংসের জাত বলে পরিচিত। ব্রাহমা গরু দেখতে অনেকটাই দেশি গরুর মতো। কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়। এই গরুর গোশতের স্বাদ দেশি গরুর মতো। এর গায়ে চর্বিও কম হয়। যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি।

ব্রাহমা গরুর আদি নিবাস ভারতে। বর্তমানে যেসব ব্রাহমা গরু বাংলাদেশ, ভারত বা অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায় এগুলো মূলত ব্রাহমার সিমেন বা শুক্রাণু দিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া শঙ্কর জাতের গরু। সাধারণভাবে ব্রাহমা গরুর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণের মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়-

১. এর উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীলতা

২. দীর্ঘ জীবন ও

৩. ক্রস-ব্রিডিংয়ে উচ্চফলন।

সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজির বেশি হতে পারে। আর একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের গাভী গরু ওজন হবে ৫০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ব্রাহমা গরু সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারে। সাধারণত একটি ব্রাহমা গরু ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এ ছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ার কারণে ব্রাহমা জাতের গরুর রোগবালাই অনেক কম হয়।

কেন বাংলাদেশের নিষিদ্ধের তালিকায় ব্রাহমা গরু? তা হলো- দেশে এক সময় গরুর একটা বড় অংশ আসতো ভারত থেকে। কিন্তু ২০১৪ সালে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে সীমান্তে কড়াকড়ি করা হয়। যে কারণে এক পর্যায়ে দেশীয় পর্যায়ে গোশতের চাহিদা পূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। সে সময় দেশিয় মাংসের চাহিদা পূরণে সরকার ব্যাপকভাবে ব্রাহমা গরু উৎপাদনের দিকে যায়। খামারিদের জন্য সহজ ও লাভজনক হওয়ায় এবং রোগ-বালাই অন্যান্য জাতের গরুর চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় খামারিদের কাছে এই গরু পালন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

কিন্তু ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে খামারিদের মাধ্যমে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে।

ব্রাহমা জাতের গরুর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো। গরুটি তার আকৃতি অনুযায়ী বেশি দুধ দেয় না। দেশে ব্যাপক হারে ব্রাহমা উৎপাদন করলে দেশের গরুর দুধের উৎপাদন কমে যাবে। ফলে ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে খামারিদের মাধ্যমে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের (সাভার) পরিচালক এস এম আউয়াল হক জানান, অনেকে ভুল তথ্য দিয়ে ব্রাহমা গরু আমদানির চেষ্টা করেন। তবে সরকার সচেষ্ট রয়েছে, যাতে ব্রাহমা গরু আমদানি করতে না পারে।

ভিডিও দেখুন:

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close