করোনাজীবন-যাপন

করোনায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ দূর করার ১৪ উপায়

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন সবাই। এর উপর আবার শিক্ষার্থীদের রয়েছে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো আরো একটি উদ্বেগের বিষয়। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মনের উপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ।এই সময়ে শিক্ষার্থীদের যে বাড়তি মানসিক চাপ, তা কাটাতে করণীয় সম্পর্কে মত দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় মনোবিজ্ঞানীরা। যেকোন বিপদ মোকাবিলায় প্রয়োজন ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের মনোবল অটুট থাকা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

এ সময়ে মানসিক চাপ কমাতে যে বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করেছেন মনোবিজ্ঞানীরাঃ

১. সৃষ্টিশীল কাজে মননিবেশ করাঃ করোনাভাইরাসের দুশ্চিন্তা থেকে মনকে একটু পরিত্রাণ দেয়া প্রয়োজন। কোনো কাজ ছাড়া এ সময়ে ঘরে একা বসে থাকলেই দুশ্চিন্তা বাড়বে। তাই এ সময়টা শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলভাবে কাজে লাগাতে পারে। ঘরে বসে গান শুনুন, বই পড়ুন অথবা লেখালেখির মতো আনন্দময় ও সৃজনশীল কাজে মন দিন। এতে সময়টাও কেটে যাবে পাশাপাশি দুশ্চিন্তাও কমবে।

২.পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানঃ পরিবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটান। হোম কোয়ারেন্টাইনে বা ঘরে থাকার ক্ষেত্রে মানসিকভাবে চাঙ্গা হওয়ার অন্যতম মাধ্যম এটি। নিজের সবচেয়ে পরিচিত ও কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। এর ফলে মানসিকভাবে হালকা হবেন। বন্ধু ও সহপাঠীদের কাছ থেকে দূরে থাকার চিন্তাও দূর হবে।

৩. আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিনঃ এই আতঙ্কময় সময়ে কেবল আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন। তারা আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সহায়তা করবেন।

৪. বন্ধু-স্বজনদের খোঁজ নিনঃ প্রায় আবদ্ধ অবস্থায় বিচ্ছিন্নতার জন্য নিজেকে অসহায় লাগতে পারে। তাই বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন। একেঅপরের খোঁজ রাখুন। করোনা সংক্রান্ত কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে কীভাবে, কার কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবেন, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন।

৫. সব সময় করোনা নিয়েই পড়ে থাকবেন নাঃ দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা যাতে না বাড়ে এজন্য শিক্ষার্থীদের সব সময় করোনা নিয়ে পড়ে থাকা সমীচীন নয়। অনেক সময় তাদের উচিত প্রচারমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ আর এর পরিণতি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য, সংবাদ এড়িয়ে চলা। এতে বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হবে না। তাই করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য জানার পাশাপাশি অন্যান্য অনুষ্ঠানও উপভোগ করুন।

৬. যার যার ধর্মীয় চর্চা করুনঃ ধর্মচর্চার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আত্মতৃপ্তি হয়। মনের ভেতর প্রশান্তি আসে। তাই নিয়মিত ধর্মচর্চা করতে পারেন।

৭. বয়স্কদের যত্ন নিনঃ বাড়িতে থাকার সময় প্রত্যেকের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে গল্প করুন। তাদের সেবা নিন। ওষুধ, খাবার ইত্যাদি এগিয়ে দিন।

৮. শরীরচর্চা করুনঃ ঘরে থাকাবস্থায় নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। এত শারিরীকভাবে ফিট থাকার পাশাপাশি মনও প্রফুল্ল থাকবে। কথায় আছে, শরীর ভালো তো সব ভালো।

৯. ডায়েরি লিখুনঃ এ সময়ের স্মৃতিগুলো ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করুন। যার ফলে নিজের বর্তমান সময়টুকু কাগজের পাতায় ধরে রাখতে পারবেন।

১০. শিশুদের সঙ্গে মিশুনঃ ঘরে থাকার সময়ে একা বা শুধুমাত্র স্মার্টফোনের উপর থাকলে আপনার একঘেয়েমি তৈরি হবে। এতে দুশ্চিন্তাও চলে আসতে পারে। তাই এ সময়ে বাড়ির শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের মনের কথা শুনুন। তাদের মতামত নিন। তাদের বয়সের স্তরে নেমে তাদের সঙ্গে সাপলুডু বা তাদের ইচ্ছায় খেলা যায় এমন কোনো গেমস খেলতে পারেন।

১১. বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ওপর ভরসা রাখুনঃ কেবল বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া সঠিক তথ্যের ওপর ভরসা রাখুন। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যকারী এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত তথ্যসমূহ নিজে জানুন আর পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। তথ্যের জন্য কেবল নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর বা সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞের উপর আস্থা রাখুন।

১২. আস্থা রাখুন নিজের ওপরঃ নিজের উপর আস্থা রাখুন। অতীতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। আত্মপ্রত্যয়ী থাকুন; এতে আপনার মানসিক চাপ অনেকাংশে লাঘব হবে।

১৩. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুনঃ সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন। ঘুম, ঠিক সময়ে খাবার, বাড়িতে হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি বন্ধ করবেন না। সুষম আর নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। সময়মতো ঘুমান, হালকা ব্যায়াম করুন এবং অবশ্যই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ধূমপান, মদ্য পান বা নেশা এড়িয়ে চলুন।

১৪. ভবিষ্যত পরিকল্পনা করুনঃ এই অবসর সময়ে নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যান। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে নিজের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হোন। করোনা পরিস্থিতি শেষে কী করবেন ভেবে রাখুন।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close