করোনাবিশ্বজুড়ে

করোনার ‘খোঁজ’ দেয়া সাংবাদিকের খোজ মেলেনি এখনো

চীন সরকারের রোষানলে পড়ে নিখোঁজ হন তারা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া সম্পর্কে বিশ্বকে জানানো সেই তিনজনের খোঁজ মেলেনি দু’মাসেও। করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথমদিকে যিনিই মুখ খুলেছেন, তিনিই চীনা সরকারের রোষানলের শিকার হয়েছেন। নিখোঁজ তিনজনের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। এরা সবাই উহানে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করেছিলেন।

উহানের ‘সত্য’ বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিলেন এই তিনজন। পরে সরকারের রোষানলে পড়ে নিখোঁজ হন তারা। দু’মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের দেখা মেলেনি। চেন কিউশি, ফ্যাং বিন এবং লি জেহুয়া নামের এই তিন তরুণ পৃথক পৃথকভাবে উহান শহরের ভিতরের নাটকীয় ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছিলেন।

এই তিন চীনা নাগরিক উহানের ভয়াবহতা প্রকাশ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তবে তাদের অবস্থান ফেব্রুয়ারি থেকে রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউটিউবে তাদের জনপ্রিয় অ্যাকাউন্টগুলি – যা চীনের মূল ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ তবে এখনও সেগুলিতে ভার্চুয়াল বেসরকারী নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে প্রবেশ করা যায়। তবে তাদের সবাই এখন চুপ হয়ে গেছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কী আচরণ করেছে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটা রহস্য হয়েই রয়েছে। চীন সরকার তাদের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।

হাসপাতালের বাইরে মিনিবাসে লাশের স্তুপের একটি ভিডিও প্রকাশের পরে উহানের ব্যবসায়ী ফ্যাং নিখোঁজ হয়ে যান। তার সংক্ষিপ্ত সেই ভিডিওতে হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোগী দেখতে হিমশিম খাওয়ার দৃশ্যও ছিল। অনেক রোগী প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছে এমন দৃশ্যও ভিডিওতে দেখা গেছে।

তারপরে তিনি একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এত লোক মারা গেল? কখন এটা ঘটেছে? গতকাল? অনেক মৃতদেহ রয়েছে।’এই সাংবাদিকটি টুইটারে চীনা সাংবাদিক জেনিফার জেং শেয়ার করার পরে ফুটেজটি ভাইরাল হয়েছিল। নিখোঁজ হওয়ার আগে ফ্যাং দাবি করেছিলেন, অফিসাররা তার বাড়িতে প্রবেশ করেছিল এবং তাকে ফেব্রুয়ারি ১ তারিখে এই ভিডিওটি পোস্ট করার পরে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তবে ৯ ফেব্রুয়ারি তার অ্যাকাউন্টটি নীরব হয়ে যায়। তারপরে আর কোন খোঁজ মেলেনি।

৩৪ বছর বয়সী অ্যাক্টিভিস্ট চেন একজন মানবাধিকার আইনজীবী। আগস্টে হংকংয়ের বিক্ষোভ চলাকালীন তার প্রচারের ফলে কর্তৃপক্ষ তাকে হয়রানি করে। মূল ভূখণ্ড চীনে ফিরে এসে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলি মুছে ফেলেছিলেন বলে জানা গেছে। উহান থেকে তার প্রথম ইউটিউব ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, আমি সত্যিই যা হচ্ছে তা নথিভুক্ত করতে আমার ক্যামেরা ব্যবহার করব। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমি সত্যকে আড়াল করব না।’

উহানের হাসপাতালে একজন নারী হুইলচেয়ারে মৃত আত্মীয়ের লাশ নিয়ে বসে আছেন। তিনি কাউকে ফোন করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু এরপরই তিনিও হুইল চেয়ারেই মারা যান। এমন একটি হৃদয় বিদারক ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। এটাই ছিল তার সর্বশেষ পোস্ট। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার টুইটার অ্যাকাউন্টটি তার এক বন্ধু চালাচ্ছেন, তিনি সেখানে চেনের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘চেন কোথায় এবং কীভাবে আছে আমাদের বলতে পারেন? দয়া করে ওকে বাঁচান!’

সাংবাদিক লি জেহুয়া (২৫) চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভিতে কাজ করতেন এবং উহান থেকে স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করছিলেন। রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) খবরে বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি পরিদর্শন করার পরে লি টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। উহানের ল্যাব থেকে করোনা ছড়িয়েছে এমন দাবি করার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে লি কে আর দেখা যায়নি।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close