শিক্ষা-সাহিত্য

মুজিব গ্রাফিক নভেল; নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেতুবন্ধন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ প্রকাশিত হয়েছে সপ্তম খণ্ড। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে মোট ১০ খণ্ডে সমাপ্ত হবে এই গ্রাফিক নভেল সিরিজ। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) প্রকাশিত এই গ্রাফিক নভেল সরাসরি তত্ত্বাবধান ও পরিবর্তন-পরিমার্জন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিআরআই জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের মধ্যেই এই গ্রাফিক নভেলের ১০ খণ্ড সম্পন্ন করা হবে। সেই সঙ্গে সবগুলো খণ্ড একত্রে একটি ভলিউমে প্রকাশ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সেতুবন্ধন হিসেবে এই গ্রাফিক নভেল কাজ করবে। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, জাপানিজ এবং আরও বেশ কিছু ভাষায় অনুবাদ করা হবে এই গ্রাফিক নভেল। যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

সিআরআই জানায়, ছোটবেলায় আমরা অনেক বিখ্যাত মনীষীর সচিত্র বই পড়েছি। ছোটদের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা এ রকম সচিত্র বই প্রকাশ করছি। মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিংকন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বিশ্ববরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে জীবনীভিত্তিক সচিত্র উপন্যাস বা কমিক নভেল সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। জাতির পিতার জীবনী, কৃতিত্ব ও অবদান নিয়ে তথ্যবহুল ও পরিচিতিমূলক প্রকাশনা ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’।

সিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস জানান, মুজিব গ্রাফিক নভেলের প্রতিটি সংখ্যা খুঁটিনাটি দেখে দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এই নভেলের প্রকাশক আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই। তিনি জানান, গ্রাফিক নভেলের স্বাভাবিক প্রয়োজনে সংলাপ জুড়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন করে ছবি আঁকতে হয়েছে। কিন্তু তা যেন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র বর্ণনাকে কোনোভাবেই বিকৃত না করে, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখেন।

সিআরআইয়ের ক্রিয়েটিভ এডিটর ও সিরিজের এডিটর শিবু কুমার শীল জানান, ২০১৪ সাল থেকে এই গ্রাফিক নভেলের কাজ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও গ্রাফিক নভেলের প্রকাশক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও সহ-প্রকাশক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আগ্রহে সিআরআইয়ের দু’জন ট্রাস্টি ২০১৫ সাল থেকে কাজটি পুরোদমে শুরু করি।

এদিকে গ্রাফিক নভেলের শিল্পী রাশেদ ইমাম তন্ময় জানান, বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, বঙ্গবন্ধুকে মানুষ কীভাবে দেখে, সেই ভাব ফুটিয়ে তোলা। আমি কীভাবে দেখি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তরুণ বয়সের মুজিবকে তো সবাই দেখেননি, কিন্তু তার তরুণ বয়সের কার্যক্রম সবার মনে একজন মুজিবকে এঁকে দিয়েছে। সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ দারুণ জনপ্রিয় শিশু-কিশোরদের কাছে। এই সিরিজের পঞ্চম পর্ব হাতে নিয়ে পড়ছিলেন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাবজিরুল ইসলাম। গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর প্রথম পর্ব যখন প্রকাশ পায় তখন হাইস্কুলের শিক্ষার্থী সে। তার মামার দেওয়া উপহার প্রথম পর্ব হাতে পাওয়ার পর প্রতিবছর সে অপেক্ষা করেছে এই সিরিজের পরবর্তী পর্বের জন্য। বই হাতে নিয়ে এই খুদে পাঠক বলেন, ‘এই কমিক একেবারেই অন্যরকম। এটি পড়তে গেলে মনে হয়, আমিও বুঝি সেই সময়ে চলে গেছি। বিশেষত তার বাবার সঙ্গে ফুটবল খেলার অংশটুকু খুব ভালো লেগেছে।’

২০১৮ সালের বইমেলায় এসে প্রথম গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর সঙ্গে পরিচয় হয় তাজরিয়ান আহমেদের। এরপর থেকে প্রতি বইমেলায় এসে এই বইয়ের খোঁজ করেন এ খুদে পাঠক। কেন ‘মুজিব’ গ্রাফিক নভেল ভালো লাগে- জানতে চাইলে তাজরিয়ান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার দাদার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক গল্প শুনেছি। তিনি যেভাবে গল্প বলতেন, এই বইতেও একইভাবে আমি গল্পের মুজিবকে দেখতে পাই। আর সেসঙ্গে অনেক কিছু শিখতেও পারছি এখান থেকে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনেক কথা জানা থাকলেও এই গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ পড়ার পর সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুকে সামনে দেখতে পেয়েছে বলে জানায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐশী। এই শিক্ষার্থী জানায়, ‘শুধু বইয়ে পড়া তথ্যে বঙ্গবন্ধুকে দেখা যায় না। তার কথা মুখস্থ করলেও আসল বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাইনি কখনও। কিন্তু এই গ্রাফিক নভেলে আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই। সেসঙ্গে তার সম্পর্কে যা জানি আমি, তা যেন বাস্তবে দেখা যায় এই গ্রাফিক নভেল বইগুলোর পাতায়।

এদিকে তৃতীয় শ্রেণির রাইসা ও দ্বিতীয় শ্রেণির রাইয়্যানের হাতেও দেখা যায় গ্রাফিক নভেল মুজিব। তারা মাত্র ভালো করে পড়তে শিখেছে। আর সে কারণেই গ্রাফিক নভেলের লেখা এবং ছবিগুলো তাদের কাছে অনেক ভালো লাগে। গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের ছবিগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে। সময় পেলে পাতা উল্টিয়ে একসঙ্গে বসে ছবিগুলো দেখি আমরা।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের অসামান্য দলিল ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি হিসেবে থাকার সময় নিরিবিলি সময়ে আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি। তবে তার লেখা চারটি খাতা হারিয়ে গিয়েছিল! দীর্ঘ সময় পর ২০০৪ সালে এগুলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে আসে। এর কিছুদিন আগেই শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে। হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী। চারটি খাতা পাওয়ার পর তার প্রবল উচ্ছ্বাসের কথা বইটির ভূমিকায় লিখেছেন শেখ হাসিনা, ‘খাতাগুলো পেয়ে আমি তো প্রায় বাকরুদ্ধ। এ হাতের লেখা আমার অতি চেনা। ছোট বোন রেহানাকে ডাকলাম। দুই বোন চোখের পানিতে ভাসলাম। হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পিতার স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করলাম। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। তার পরই এই প্রাপ্তি। মনে হলো যেন পিতার আশীর্বাদের পরশ পাচ্ছি।’

শিশু-কিশোরদের কাছে স্বল্প ভাষায় গল্পের ছলে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু হয় গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর কার্যক্রম। বর্তমানে তা অনেক খুদে পাঠকের কাছে জনপ্রিয় একটি কমিক সিরিজ। এই বই প্রকাশের জন্য অনেকেই অপেক্ষা করে থাকেন। আর তাদের জন্যই মুজিববর্ষে সবক’টি বই নিয়ে ভলিউম প্রকাশ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ সিরিজের সাতটি খণ্ড অনলাইনে ‘রকমারি’তে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া মীনাবাজারের আউটলেট, চর্চার শোরুমসহ কয়েকটি স্থানে পাওয়া যাচ্ছে গ্রাফিক নভেল সিরিজটি। মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে ছবিগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close