কৃষিপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

ক্যান্টালোপে হাসছে পাবনার আনিসুরের ক্ষেত

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা: ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে যখন দেশজুড়ে কৃষকের হাহাকার, ঠিক তখনই ক্যান্টালোপ প্রজাতির বিদেশী ফল চাষে সাফল্য পেয়েছেন পাবনার কৃষক আনিসুর রহমান। অপ্রচলিত কিন্তু দারুণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, সুস্বাদু এসব ফলের বাজার সম্প্রসারিত হলে, স্বল্প জমিতেই লাভের মুখ দেখবেন কৃষক বলছেন বিশেষজ্ঞরাও। গতানুগতিক ফসলের পরিবর্তে পরিকল্পিত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চমূল্যের এসব ফসল আবাদে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের। স্বল্পজমিতে কম বিনিয়োগে অধিক লাভ হওয়ায় এসব ফসলের চাষ স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে বেকার যুবকদেরও।

ছবি: পাবনার সদর উপজেলার দাপুনিয়া মির্জাপুরে নিজ ক্ষেত থেকে ক্যান্ডালোপ প্রজাতির রকমেলন ফল তুলছেন চাষী আনিসুর রহমান

সরেজমিনে, পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে কৃষক আনিসুর রহমানের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে উজ্জল হলদে রঙের নজরকাড়া গোলাকার এক ধরণের ফল। আনিসুর জানালেন, ফলটির নাম মেলন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিচিত সাম্মাম নামে, কোথাও কোথাও হানিডিউও বলা হয়। মেলন মূলত বাঙ্গি, তরমুজ কিংবা মিষ্টি কুমড়া গোত্রের ফল। দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মত হলেও, সুমিষ্ট, সুস্বাদু এ ফলের স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা। এর আদি নিবাস ইউরোপে হলেও চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া ও ভারতেও উৎপাদন হচ্ছে। অনুসন্ধিৎসু কৃষক আনিসুরের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি পাবনার দাপুনিয়াতেও ফলটির সফল আবাদ হয়েছে।

কেবল হানিডিউ নয়, আনিসুরের ক্ষেতে হাসি ছড়াচ্ছে খসখসে আবরণের রকমেলন, মিষ্টিকুমড়োর মত সবুজাভ গোলাকৃতির মাশমেলনও। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, আমাদের দেশের বাজারে অপ্রচলিত হলেও মধ্যপ্রাচ্য, চীন, জাপান ও পশ্চিমা দেশগুলোতে এসব ফল খুবই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর, নানা রোগের প্রতিষেধকও বটে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে বারোমাস চাষ হয়, লাভের অঙ্কটাও বেশ।

পাবনার টেবুনিয়া বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপপরিচালক কৃষিবিদ জে এম আব্দুল আওয়াল জানালেন, ক্যান্টালোপ প্রজাতির মেলন জাতীয় ফল গুলো আমাদের দেশের বাঙ্গির মত দেখতে হলেও মিষ্টতায় তিনগুণ বেশী। আর বাঙ্গির বাজারজাতকরণের সবচেয়ে বড় সমস্যা ফেটে যাওয়া। তবে, ক্যান্টালোপ প্রজাতির ফলগুলো যতই পেকে যাক, তা ফাটে না। আর পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনেক উপকারী একটি ফল।

আব্দুল আওয়াল আরো জানান, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত বারো মাসই এ ফলগুলো চাষাবাদ করা যায়। মাত্র ৫৫ দিনে ফসল পাওয়া যায়, ফলে সাশ্রয়ীও বটে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের এ বক্তব্য যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ মিলল কৃষক আনিসুরের কথার সুরেই। জানালেন, ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করেও দেখেছেন লাভের মুখ। বাজার সম্প্রসারিত হলে এই ফল যে তার ভাগ্য ফেরাবে, অনেকটা নিশ্চিতই তিনি।

কৃষক আনিসুর রহমান জানান, গত বছর শখের বশে দেড় বিঘা জমিতে বিদেশী প্রজাতির বারোমাসী তরমুজ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তাই এ বছর তরমুজের পাশাপাশি বড় পরিসরে দশবিঘা জমিতে মেলন, রকমেলন ও মাশমেলনের চাষ করেছেন। স্থানীয় বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সুপার শপে ভালো বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী দামে তিনি প্রতিকেজি হলুদ মেলন ১২০ টাকা, রক মেলন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। সব ঠিক থাকলে জমিতে যে ফল রয়েছে, তাতে মৌসুম শেষে সব খরচ বাদে আট থেকে দশ লাখ টাকা লাখ লাভের আশা তার।

আনিসুর জানান, বর্তমান বাজার মূল্যে এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে তের থেকে পনের হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ তা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ বার হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, পাবনার উপপরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, চলতি মৌসুমে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ধানের উৎপাদনের কারণে কৃষক লোকসানে পড়েছে। সেক্ষেত্রে কেবল ধানের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে, বিকল্প ফসল হিসেবে ক্যান্টালোপের মত উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষক ভালো লাভ পেতে পারে। যদিও, দেশের বাজারে অপ্রচলিত এরপরেও আনিসুরের ভাল লাভ হয়েছে। আমরা উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব ফলের বাজার ও চাষাবাদ সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close