ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত। স্বাভাবিক হয়নি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ব্যবসা-বাণিজ্যও। কিন্তু এই মহামারিও থামাতে পারেনি পদ্মা বহুমুখী সেতুর উন্নয়ন কাজ। গত ১০ জুন জাজিরা প্রান্তে ২৫ ও ২৬ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে ৩১তম স্প্যান। এরমধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর সাড়ে ৪ কিলোমিটারেরও বেশী অর্থাৎ ৪ হাজার ৬৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো।
জাজিরা প্রান্তের ২০টির মধ্যে এই শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর বিশেষ একটি ধাপ সম্পন্ন হলো। এতে বসে যাওয়া ৩১তম স্প্যানের মধ্যে ২৯টি স্প্যান একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে মূল সেতুর সাড়ে ৮৭ শতাংশেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হলো। তবে সার্বিক উন্নয়ন কাজ মে মাস পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে সাড়ে ৭৯ শতাংশ। ৩১তম স্প্যানটিই জাজিরা থেকে যুক্ত হয়ে মাওয়ার কাছাকাছি চলে আসল।
চলতি বছর এই সেতুর ১১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সারা দেশে সাধারণ ছুটির মধ্যেও ২৭ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। অর্থাৎ করোনা দুর্যোগের মধ্যেও সেতুর মোট ৫টি স্প্যান বসানো হলো।
সূত্র জানায়, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের কারণে ২৬তম পিলার স্থাপনে বিলম্ব হয়। সেখানেও বিকল্প চ্যানেল কেটে দিয়ে এটি স্থাপন করতে হয়েছিল। বর্ষা মৌসুমে জাজিরার ৪২তম পিলার থেকে মাওয়ার ১৩তম পিলার এলাকা পর্যন্ত পলি পড়ে নাব্য সৃষ্টি হয়। তাই ভরা বর্ষার আগেই এই স্প্যান স্থাপন করা না গেলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতো। তাই এটি নির্ধারিত সময়ের আগেই স্থাপন করা হয়।
এখন মাওয়া প্রান্তের মাত্র ১০টি স্প্যান বসানো বাকি আছে। যা ভরা বর্ষায়ও পিলারের ওপর বসাতে নাব্য বাধা হতে পারবে না। কারণ মাওয়ার এই অংশে মূল পদ্মা। সবসময় স্রোত থাকে। তাই এখানে পলি জমতে পারে না। এই অংশের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসেছে আগেই। এখন এই দুই স্প্যানের দু’পাশে বাকি ১০ স্প্যান বসে গেলেই পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হবে।
চলতি অর্থ বছরে বড় প্রকল্পের মধ্যে সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ পদ্মা সেতুতে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা কমিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী বছর জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, ‘আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই আরো একটি স্প্যান বসানো হবে। একই সঙ্গে রেলওয়ের স্ল্যাব বসানোর কাজও এগিয়ে চলছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের আরো বলেন ‘আগামী বছর জুন মাসে উন্নয়ন কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও তা করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। মহামারি করোনার মধ্যেও পাঁচটি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি উন্নয়ন কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চলতি জুন মাসের মধ্যে মূল সেতুর ৮৮ শতাংশ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে।’
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল সেতুর ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।
/আরএম