আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনস্থানীয় সংবাদ

শীত মৌসুমেও আশুলিয়ায় বর্ষাকাল, পানিবন্দি হাজারো মানুষ

শরিফুজ্জামান ফাহিম, নিজস্ব প্রতিবেদক: গায়ে শীতের কাপড়, ঘর ও বাহিরে হাঁটু পানি। শীত মৌসুমেও দুর্গন্ধময় ময়লা পানি মাড়িয়ে শত শত মানুষ পানিবন্দি। বন্যা বা জোয়ার ভাটার সুযোগ নেই, নেই ভারী কোন বর্ষণও, তাহলে পানিবন্দি মানুষ গুলোর বসবাস কোন এক খন্ড দীপে? না নাটক সিনেমার কোন গল্প নয় মোটেও, পানিবন্দির ঘটনাটি শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের। নিশ্চিতপুরে এমন অনিশ্চিত জীবনের গল্প তৈরি হবে, ভাবেনি এলাকাবাসী। রসুই ঘরেও পানি, ফলে রান্না করে খাওয়ার উপায় নেই। খেটে খাওয়া শ্রমিকদের দুর্দশা এখন চরমে।

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার অন্বেষা গলি। এখানকার পানি নিষ্কাশনের একটি ড্রেন আটকে দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এখানেই দীর্ঘদিন ধরে পানি বন্দী শ্রমিকসহ বাড়ির মালিকরা। বাসা বাড়ি ও কয়েকটি পোশাক কারখানার পানি জমে ঘরে উঠেছে পানি। পানি অপসারনের চেষ্টা করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল তা করে দিচ্ছে পন্ড। অভিযোগ রয়েছে, আশেপাশের কারখানার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিজস্ব ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ড্রেন ব্যবস্থা করলেও, পানি নিষ্কাশনের দোহাই দেয় কারখানা থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে প্রায় সময় প্রভাবশালীরাই বন্ধ করে দেয় সেই ড্রেন। আবার এক পক্ষ টাকা নিয়ে খুলে দেয়।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার অন্বেষা গলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুষিত পানি দিয়ে ডুবে গেছে অলিগলি। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছে এই দুষিত পানি। বাসার টয়লেটের পানি উঠছে ঘরে। ভাড়াটিয়াসহ বাসার মালিকরা উঠেছে অন্য ভাড়া বাসায়।

পানিবন্দি সোনিয়া বলেন, “আমি এস টোয়েন্টি ওয়ান অ্যাপারেলস লিমিটেডে কাজ করি। আমারা দীর্ঘ দিন ধরে ঘরে দুষিত পানি ঢুকছে। প্রতিদিন সকালে উঠে পানি সেঁচ দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে রান্না করতে হয়। তার পর খেয়ে কারখানায় যেতে হয়। দুপুরে খাওয়ার জন্যও বাসায় আসতে পারি না। আমরা খুব কষ্টে আছি। বাসা ছেড়ে দিয়েও যেতে পারছি না।”

ভাড়াটিয়া মনির বলেন, “আমি এখানেই ভাড়া থাকি। একটি দোকান আছে আমার। ১ ঘন্টা পর পর দোকানে পানি ওঠে। সব সময় পানি সেঁচ দিতে হয়। আমার ক্রেতাও কমে গেছে কয়েক গুন। দুষিত পানির জন্য কেউ কিছু কিনতে আসে না। পানি সেচ দিতে দিতে হাতে ঘাঁ হয়ে গেছে। বাচ্চাদেরও হচ্ছে ডায়রিয়া। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে চাই।”

বাড়িওয়ালা বিউটি বেগম বলেন, “আমি ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। আমার বাসায় বর্তমানে একটি ভাড়াটিয়াও নেই। এই মাসে আমি কিভাবে কিস্তি দেবো ভেবে পাচ্ছি না। আমি বাড়িওয়ালা হয়েও আজ অসহায়। ভাড়াটিয়ার জন্য কিছু করতে পারছিনা। আমরা সবাই খুবই দুরাবস্থায় আছি। কে দেখবে আমাদের?”

বাড়ির মালিক ইয়াসিন মোল্লা বলেন, পানি সেঁচ দেওয়ার জন্য মেশিন বসানো হয়েছিল । কিন্তু কচুমদ্দিন কেচু নামের এক ব্যক্তি বাঁধা দেয়। কেচুর দাবী তার জীবন গেলেও এখানে পানি অপসারনের ড্রেন করতে দেবে না। এতো মানুষ পানি বন্দি কিন্তু তার মন গলে না। একটি ব্যক্তির জন্য প্রায় ১ হাজার শ্রমিকসহ বাড়িওয়ালারা আজ অসহায়।

এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাদের মৃধা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা প্রয়োজন, কিন্তু ভাই সামনে নির্বাচন! কি করুম! আপনার কারখায় গিয়ে বলেন তারা পানি নিষ্কাশনের কি ব্যবস্থা করেছে। আর ও এলাকায় মাদবর বেশি, ওখানে কথায় কোন কাজ হয় না। ওই এলাকায় আমি অনেক টাকা খরচ করে রাস্তা বানিয়ে দিয়েছি।

তবে স্থানীয় ইউপি সাবেক মেম্বার আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, এলাকাবাসীর দুর্ভোগ জেনে নিজ উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে। পাশপাশি এমন অসাধু প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসেনর প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close