শিক্ষা-সাহিত্য

হারিয়ে যাওয়া যাত্রাশিল্প আঁকড়ে আছে কাপ্তাই

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশে একসময় লোকজ সংস্কৃতির প্রাণ ছিল যাত্রাশিল্প। কিন্তু বর্তমানে হারিয়ে যাওয়া এ শিল্প এখনো ধরে রেখেছে হাতেগোনা কয়েকটি যাত্রাদল।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় যাত্রার খুব কদর ছিল। পাহাড়িদের বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে যাত্রা মঞ্চায়ন ছিল রীতি। কোনো গ্রামে যাত্রাপালা হলে আশেপাশের কয়েক মাইল এলাকার লোকজন যাত্রা উপভোগ করতে আসতো।

এখন তিন পার্বত্য জেলায় বলতে গেলে হাতেগোনা কয়েকটি সংগঠন ছাড়া যাত্রাশিল্পকে ধরে রাখার মতো কোনো দল নেই। যে দলগুলো টিকে আছে নিভু নিভু প্রদীপের মতো, গিরি পলাশ নাট্যগোষ্ঠী তাদের অন্যতম। কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা কেপিএম এলাকায় গড়ে ওঠা দলটি এখনও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৮৬ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় গিরি পলাশ নাট্যগোষ্ঠী। এ পর্যন্ত ৭০টি নাটকের হাজারেরও বেশি মঞ্চায়ন করেছে দলটি। অনেক সীমাবদ্ধতা কাঁধে নিয়েও পার্বত্য অঞ্চলে যাত্রাশিল্পকে আঁকড়ে ধরেছে তারা।

গিরি পলাশ নাট্যগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালা হলো- ‘শ্মশানে হলো ফুলশয্যা’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘বিজয় বসন্ত’, ‘সাধক রামপ্রসাদ’, ‘শাহী ফরমান’, ‘রাঙা তলোয়ার’, ‘ময়লা কাগজ’, ‘এক মুঠো অন্ন চাই’, ‘ফিরিয়ে দাও সিংহাসন’, ‘হত্যার প্রতিশোধ’ ইত্যাদি।

বিভিন্ন সময়ে যাত্রাপালাগুলোর নির্দেশনা দিয়েছেন কাপ্তাইয়ের খ্যাতিমান অভিনেতা রনজিত কুমার মল্লিক, প্রয়াত নৃপতি ভট্টাচার্য, আনিসুর রহমান ও রুপায়ন কিশোর মল্লিক।

একসময় শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিরি পলাশ নাট্যগোষ্ঠীর প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যেত। পুরো শীত মৌসুম তারা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রা মঞ্চায়ন করত। কিন্তু এখন আগের মতো ব্যস্ততা আর নেই। গত কয়েক বছরে হাতে গোনা দু-একটি পালা মঞ্চে আনতে পেরেছে দলটি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খ্যাতিমান অভিনেতা আনিসুর রহমান জানান, একটি যাত্রাপালা মঞ্চায়ন করতে যে পরিমাণ খরচ হয় তা এখন ওঠে না। ঘরে ঘরে টিভি, হাতে হাতে মোবাইলের এ যুগে এখন রাত জেগে যাত্রাপালা দেখার আগ্রহ তেমন নেই।

সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার নাট্যব্যক্তিত্ব রনজিত কুমার মল্লিক জানান, একশ্রেণীর দর্শক যাত্রাপালাকে নর্তকীর নাচ বলে অপপ্রচার চালায়। যা আমাদের যাত্রাশিল্প ধ্বংসের অন্যতম কারণ। অভিনেতা-নির্দেশক ইসমাইল ফরিদী জানান, যাত্রাশিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এছাড়া মিডিয়াতে যাত্রা প্রদর্শন ও যাত্রাকে সামাজিক মর্যাদা দেওয়া হলে আমাদের লুপ্তপ্রায় যাত্রাশিল্প আবারো প্রাণ পাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close