দেশজুড়েশিল্প-বানিজ্য

৫০০সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমতি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: সরকার অবশেষে বিদ্যমান ১৬৫সিসি ইঞ্জিনের সীমা থেকে ৫০০সিসির মাঝারি সাইজের মোটরসাইকেল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের অনুমতি দিতে শুরু করেছে।

রোববার (১৭ অক্টোবর) শিল্প মন্ত্রণালয় ইফাদ মোটরস লিমিটেডকে স্থানীয়ভাবে উচ্চ ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদনের সম্মতি দিয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানা গেছে।

ইফাদ মোটরস এখন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে তার মোটরসাইকেল কারখানা স্থাপন করছে। কোম্পানির পরিচালক তাসকিন আহমেদ বলেছেন, সেখানে ৩৫০সিসি এবং বড় ইঞ্জিনের আইকনিক রয়েল এনফিল্ড বাইক তৈরি করা হবে।

স্থানীয় কারখানাগুলি যাতে ৫০০সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারে, সেজন্য সোমবার (১৮ অক্টোবর) শিল্প মন্ত্রণালয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখে আমদানি নীতিমালা আদেশ ২০২১-২৪ এর খসড়া সংশোধন করেছে।

বিদ্যমান নীতিমালা স্থানীয় বাজারের জন্য ১৬৫সিসির বেশি ইঞ্জিন বা মোটরসাইকেল আমদানির অনুমতি দেয় না। তবে, স্থানীয় উৎপাদনকারীরা শুধুমাত্র রপ্তানির জন্য ৫০০সিসি পর্যন্ত উচ্চ ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে পারে।

তবে ইফাদ মোটরসের উৎপাদন অনুমোদন এবং আমদানি নীতিমালার আদেশ এ প্রস্তাবিত সংশোধনের ফলে এ বাধা বর্তমানে দূর হচ্ছে। এখন থেকে উৎপাদনকারীরা স্থানীয় বাজারে উচ্চতর ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারবে এবং সেই সঙ্গে রপ্তানি করতে পারবে।

২৮ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে সরকারি দপ্তর এবং মোটরসাইকেল শিল্পের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তবে বৈঠকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মাসের পূর্বে বাংলাদেশের রাস্তায় উচ্চতর ইঞ্জিন ধারণক্ষমতার বাইকের অনুমতি দেওয়ার ধারণার বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ইঞ্জিনের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা শিথিল করা হলে তারা ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কা করছিল।

অপরদিকে মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মোটরসাইকেল শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণের স্বার্থে ইঞ্জিনের ধারণ ক্ষমতা সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।

সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি মোটরসাইকেলের সিসি সীমা বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। এবং ইফাদের মতো প্রতিষ্টান ছাড়া উন্নত বাইকের জন্য কারখানা স্থাপন করতে পারবে না বলে মত দেন।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি মনে করেন, ইঞ্জিন ক্ষমতা সীমাবদ্ধতা থাকলে মোটরসাইকেল শিল্পের বিকাশ সম্ভব হবে না। কারণ এটি দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে।

সমন্বয় সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেন, আমদানি নীতিমালা আদেশে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা পূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মধ্যে হওয়া বৈঠকের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছিল। যদি বৈঠকে সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী নীতি সংশোধন করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন এবং রাস্তায় অনুমতি মূলত বিআরটিএ দিয়ে থাকে। তারা বৈঠকে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ধারণক্ষমতার নিয়ে তাদের কোনো রিজার্ভেশন নেই।

২০০০ সালে থেকে বিআরটিএ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইকের রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দিচ্ছে না কারন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি উদ্বিগ্ন ছিল যে সীমাহীন ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন বাইকগুলি পুলিশের পক্ষে আইনভঙ্গকারীদের অনুসরণ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।

যেহেতু শিল্প মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল শিল্পের পৃষ্ঠপোষক, তাই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এনবিআরের কোনো আপত্তি নেই

বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ধারণ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে গত বছরের শেষ থেকে স্থানীয়ভাবে উচ্চ ক্ষমতার বাইক তৈরির কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাবের পর, এই ধরনের বাধা দূর করার চেষ্টা চলছে।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ এবং বেশ কিছু নতুন বিনিয়োগকারী এবং বিদ্যমান রপ্তানিকারক রানারের আবেদনের উপর ভিত্তি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় রাস্তায় ৫০০সিসি পর্যন্ত বাইক চালানোর অনুমতি দিয়েছে।

কিন্তু মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার এবং উৎপাদকদের বাজার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, শিল্প মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের শেষের আগে এটি করার বিরোধিতা করে।

এখন যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিবর্তন শুরু করেছে, বিনিয়োগকারীরা হাইওয়ে-সক্ষম মোটরসাইকেলের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন উন্নত নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কারণে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেলগুলি রাস্তায় নিরাপদ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য শাখার প্রধান অতিরিক্ত সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেছেন, অভ্যন্তরীণভাবে আমরা আমদানি নীতিমালা আদেশ সংশোধনের অনুরোধ করব। আসলে আমরা এটি আরও আগে করতে চেয়েছিলাম।

তার অফিস নতুন আমদানি নীতিমালা আদেশ নিয়ে কাজ করছে যা এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close