স্বাস্থ্য
মানসিক রোগের চিকিৎসায় নিদ্রাহীনতা থেরাপি
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ মানসিক রোগের চিকিৎসায় এক অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরন করছেন ইতালির চিকিৎসকরা। এ রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বেশ কিছু রোগীকে একটানা তিন/চারদিন পর্যন্ত না ঘুমিয়ে সারারাত জেগে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসকদের নজরদারি মধ্যে নিদ্রাহীনতার এই থেরাপি বিশেষ অবদান রাখতে পারে, যা ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই ইতিবাচক হয়েছে। বাইপোলার রোগের অংশ হিসাবে থাকা বিষণ্ণতার চিকিৎসা করার জন্য এটি একটি অভিনব পদ্ধতি।
দেশটির স্যান রাফায়েল হাসপাতালের মনোরোগবিদ ডা. ফ্রান্সিসকো বেনেডেক্ট বলেন, নিদ্রাহীনতার এই থেরাপি মানসিক রোগে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। আমরা দেখতে পেয়েছি, এই চিকিৎসার পরে আমাদের রোগীরা ভালো বোধ করছে। তারা ভালোভাবে থেকেছে, তাদের পেশায় ফিরে গেছে।
বেনেডিক্ট বলেন, যখন তারা ওয়ার্ড থেকে ছাড়া পেয়েছে, তারা হাসিমুখে গেছে। তারা আত্মহত্যার কথা ভাবতো আর শেষে যখন তারা বাড়ি ফিরে গেছে, তখন তারা নতুন করে তাদের পেশাজীবন ভাবতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, রোগীরা ক্লিনিকে তখনি আসেন, যখন তারা অন্য সব চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অনেক সময় তারা আমাদের কাছে এসে বলে, আমার আর কোন উপায় নেই, আর কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। তারাই হচ্ছে এই কার্যকরী, দ্রুতগতির, বিশেষ কষ্টের চিকিৎসার জন্য আদর্শ রোগী, যাদের আচরণ বদলাতে পারে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে এই ‘ঘুমহীনতা’ থেরাপি নিয়েছেন এবং এখন এটি ইতালির জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগেও চালু হয়েছে।
স্যান র্যাফায়েল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া মিসেস নোরমা বলেন, এই চিকিৎসার পূর্বে আমি খুবই বেপরোয়া ছিলাম। তখন আমাকে যে সমস্ত ওষুধপাতি দেয়া হয়েছে, তার কোনটাই আমার বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কারণে তৈরি হওয়া বিষণ্ণতা দূর করতে পারছিল না। কেউ একজন এটাকে বলেছে আত্মার ক্যান্সার- তার সঙ্গে আমিও একমত ছিলাম। আমি একটাকে বলবো একটা দানব।
তিনি বলেন, যখন আমি একটি ভিন্ন রকম থেরাপির কথা শুনলাম, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এটা একবার পরীক্ষা করে দেখবো। যখন আমি এখানে আসলাম, তখন আমার এতটাই খারাপ লাগছিল যে, আমার মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিল। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। কারণ, যখনি আমি নাজুক বোধ করতাম, তখন আমি শুধুমাত্র ঘুমাতে চাইতাম। কিন্তু এখানে যখন তারা টের পায় যে আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন, তখন তারা বাধা দেয়। আমি বুঝতে পারছিলাম, এটা আমাকে সাহায্য করার জন্যই তারা করছে, সুতরাং আমি সেটা মেনে নিয়েছিলাম।
নোরমা আরও বলেন, এক সপ্তাহের পুরো তিন রাত জেগে থাকতে হয় এবং হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য আরো ১৭ দিন কাটাতে হয়। শুরুর দিকে এটা ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু সব শেষে মনে হচ্ছিল, তারা আমার শিরার ভেতরে কিছু একটা যেন ঢুকিয়ে দিয়েছে, এতটাই ভালো লাগছিল। আমার অনেক শান্তি লাগছিল, অনেক আরাম বোধ হচ্ছিল। এটা যেন জাদুর মতো। সূত্র: বিবিসি
#এমএস