দেশজুড়ে

আওয়ামী লীগকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি: হাসিনা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ যেকোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নীতিহীন নেতাদের লড়াই-সংগ্রামের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। নীতি আদর্শের কারণে আওয়ামী লীগকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে সম্মেলন স্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ হাসিনা।

পরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা পাকিস্তান আমল থেকেই। জাতির পিতার হাতে গড়া বলেই এই দলকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নীতিহীন নেতা নিয়ে অগ্রসর হলে সাময়িকভাবে কিছু ফল পাওয়া যায়। কিন্তু লড়াই-সংগ্রামের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক নেতার জীবনে নীতি-আদর্শ সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর সে আদর্শের জন্য যেকোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। যিনি প্রস্তুত থাকতে পারেন, ত্যাগস্বীকার করতে পারেন, তিনি সফল হতে পারেন। দেশকে কিছু দিতে পারেন। জাতিকে কিছু দিতে পারেন।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অতীতে ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নেতৃত্ব আসে সংগ্রামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, কেউ আকস্মিকভাবে একদিনে নেতা হতে পারে না। তাকে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আসতে হবে। তাকে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।

তিনি বলেন, বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মত্যাগ করেছে এবং তারই ফসল বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতি-সমৃদ্ধির পথে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেটাই করতে চাই।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে গঠন করা কোনো দল নয়। একেবারে গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত।

তিনি আরো বলেন, যে কারণে বাংলাদেশের মানুষের যতটুকু অর্জন তা যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে জনগণের কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে কিছু দিতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ পায়- এটাই প্রমাণিত সত্য।

আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরে ১৯৮১ সাল থেকে টানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালনকারী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগ এই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন।’

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। রাজনীতি আমার জন্য নতুন কিছু ছিল না। স্কুলজীবন থেকে মিছিল-মিটিং করতাম। স্কুলের দেওয়াল টপকে আন্দোলন-সংগ্রামে যেতাম।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘কলেজ জীবনে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলাম। সেখানে ছাত্রলীগ সংগঠন তৈরি করা, বিভিন্ন কলেজে ঘুরে সংগঠন করা এবং কলেজে ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেও প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু কখনো চিন্তাও করিনি আওয়ামী লীগের মতো দলের নেতৃত্ব আমাকে দিতে হবে।’

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে বারবার আঘাত আসে, আওয়ামী লীগ সংগঠনকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা অনেকেই করেছে। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই যদি দেখি- ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান। এরপর ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হলো, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলো জিয়াউর রহমান। এরপর জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া। যে যখন এসেছে সবার আগে আঘাতটা কিন্তু আওয়ামী লীগের ওপরই এসেছে।’

বিএনপির শাসনামল পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। সরকারের সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দলকে তৃণমূল থেকে আরও শক্তিশালী করার উপর জোর দেন তিনি।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close