বিশ্বজুড়ে

কাবুল ত্যাগ করছেন বাংলাদেশিরা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: অসম্ভব দ্রুত অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে গোটা আফগানিস্তান। কাবুল শহরের পতনের পর তালেবানরা সেখানকার ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। এরফলে সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশিরা দ্রুততার সঙ্গে ওই দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে রবিবার (১৫ আগস্ট) ব্র্যাকের তিনজন কর্মী টার্কিস এয়ারে কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং আশা করা হচ্ছে, আরও ছয় জন আগামী ১৮ আগস্ট আফগানিস্তান ত্যাগ করবেন।

এ বিষয়ে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গির আলম বাংলা ট্রিবিউনকে রবিবার রাতে বলেন, ‘ব্র্যাকের কর্মীরা কাবুলের একটি গেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন। তাদের দলনেতা ও ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মোহাম্মাদ করিম শিকদার আমাকে জানিয়েছেন, ১৮ আগস্ট টার্কিস এয়ারে করে তারা কাবুল ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।’

বাকি আরও পাচঁ জন হচ্ছেন— মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান, মোহাম্মাদ সরফরাজ, কামাল হোসেন, রফিকুল হক মৃধা ও ইউসুফ হোসেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস নেই এবং উজবেকিস্তান থেকে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আগে ব্র্যাকের ৩০০ থেকে ৫০০ জন কর্মী কাজ করতেন। কিন্তু এখানে গোলযোগ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রত্যাহার করা হয়। যেমন এ মাসের প্রথম দিকে পাঁচ জন ব্র্যাককর্মী ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে আসতে চাইলে তাদেরকে ফেরত যেতে নিষেধ করা হয় পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকার জন্য।’

আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি

মাঠ পর্যায়ে কাবুল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী রাষ্ট্রদূত জানান, আমরা আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশিদের বিষয়ে জানতে চেয়ে নোট ভার্বাল পাঠিয়েছি। তাদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি, কতজন বাংলাদেশি বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন এবং তারা কী অবস্থায় আছেন, সেটি যেন তারা দ্রুততার সঙ্গে জানায়।

আফগান সরকার এখন কার্যকর নয় এবং সেক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠি কাজ করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক যে কাবুলে এখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই। কিন্তু সেখানে আমলারা কর্মরত আছেন। দূতাবাস থেকে চিঠি তাদের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে লেখা হয়েছে এবং তারা সেখানে কাজ করছেন।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘আমরা দুটি হটলাইন স্থাপন করেছি এবং আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি, এটি যেন দ্রুততার সঙ্গে সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে করে কোনও বাংলাদেশি যদি আটকা পড়ে থাকেন, তবে তারা যেন যোগাযোগ করতে পারেন।’

আফগান জেলে বাংলাদেশি

আফগান জেলে তিন জন বাংলাদেশি আছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে দূতাবাস এবং তাদের একজন ইতোমধ্যে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তালেবানরা কাবুলে ঢোকার পরে তাদের কেন্দ্রীয় জেলখানার গেট ভেঙে ফেললে সেখান থেকে কয়েদিরা পালিয়ে যান। সেখানকার একজন বাংলাদেশি কয়েদি মইন আল মেজবা ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছেন যে, তিনি তার এক আফগান বন্ধুর বাসায় আছেন। আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এছাড়া ওই জেল থেকে কাউসার সুলতানা নামে একজন নারী কয়েদি পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার কোনও খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল্লাহ নামে আরেকজন বাংলাদেশি অন্য একটি প্রদেশের জেলে আছেন এবং তারও কোনও খোঁজ এখনও জানা যায়নি।’

বাংলাদেশ থেকে কেউ যাচ্ছেন কিনা

সম্প্রতি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ থেকে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি আফগানিস্থানে ‘হিজরত’ করছে তালেবানদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি আমার জানা নেই। এখানে যদি বৈধ পথে কেউ আসতে চান, তবে ঢাকায় আফগান দূতাবাস তাদের খোঁজ দিতে পারবে।’

রাজনৈতিক বিবেচনা

তালেবানরা দ্রুততার সঙ্গে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে এবং এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ বিষয়টি ঢাকায় বিবেচনা করা হবে। আমাকে যেভোবে নির্দেশ দেওয়া হবে, সেইভাবে এখানে আমি কাজ করবো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা এবং সেই কাজটি আমরা এখানে করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজটি সহজ নয় এবং এজন্য আমাদের সতর্কতার সঙ্গে এগুতে হচ্ছে।’

আফগান সৈন্যদের মনোবল ভেঙে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় বিনা বাধায় তালেবানরা কাবুল দখল করেছে এবং আফগান প্রেসিডেন্ট আশলাফ ঘানি বর্তমানে তাজিকিস্তানে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

/একে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close