আশুলিয়াপ্রধান শিরোনাম

আশুলিয়ায় নবজাতককে বিক্রি করলেন চিকিৎসক! ৫ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হাসপাতালের চিকিৎসকের হাত ধরে বিক্রি করে দেয়া এক নবজাতক শিশুকে ৮ দিন পর উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল আশুলিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ক্লিনিক মালিক ও সেই চিকিৎসকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৪ মে) সকাল ১১ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক। এর আগে রবিবার (২৩ মে) আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান চালায় আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই এমদাদ, সুদীপ কুমার গোপ ও আসওয়াদুর রহমান। এসময় নবজাতক বিক্রয় চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করে। এঘটনায় নবজাতকের বাবা বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেন।

আশুলিয়া থানার এএসআই পবিত্র কুমার মালাকার বলেন, আসামীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নবজাতককে উদ্ধার করতে আমরা রাতেই সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করি। সকালে সেই নবজাতক সহ আশুলিয়ায় ফিরে আসি। বাচ্চা সুস্থ আছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার খোসগড় গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের ছেলে ক্লিনিকের চিকিৎসক ও মালিক মোস্তফা কামাল (৩৯), টাঙ্গাইল জেলার জেলার মির্জাপুর থানার হাতরুড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে আবু হানিফ (৪০), নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বৈলশিং গ্রামের মৃত কুতুবউদ্দিন প্রামানিকের ছেলে হানিফ বিন কুতুব (৪২), শরিয়তপুর জেলার সখিপুর থানার কাঁচিকাটা গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৯), এছাড়া নবজাতক ক্রয়ের দায়ে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাহপাড়া থানার নতুন দাতপুর গ্রামের মৃত বরাত আলীর ছেলে অয়েজুলকে গ্রেফতার করা হয়।

ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন- রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার সূর্যপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মো: আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও তার স্ত্রী শিখা বেগম (২৬)।

নবজাতকের পিতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ১৭ মে আমার স্ত্রীর পেটে অনেক ব্যথা হয়। আমি ওই ক্লিনিকে গেলে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন। তাদের কথামত আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, নবজাতক উল্টো হয়ে আছে মা ও শিশুর জীবন সঙ্কটাপন্ন, দ্রুত প্রসব করাতে হবে। ভুক্তভোগী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কথায় রাজি হলে তাদের এক নারীকর্মী এসে পার্শবর্তী ঘোষবাগ এলাকার একটি বাড়িতে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যায়। পরে সেই বাড়িতে তার ডেলিভারি হয় এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শিখা। এরপরে ডাক্তার এসে বলেন, আমাদের মেয়ে খুব বেশি হলে ৩ দিন বাঁচতে পারে। ১৫ দিন বাঁচাতেও অনেক টাকার দরকার। এসব ভুল বুঝিয়ে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে যায়। পরে সন্তান ফেরত চাইলে তারা ৫৫ হাজার টাকা দাবি করেন।

নবজাতকের মা শিখা খাতুন বলেন, আমি গার্মেন্টসে হেলপার হিসাবে কাজ করি। আমি তো অতো কিছু বুঝি না। উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মিলে আমার মেয়েকে সিরাজগঞ্জে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে থানায় খবর দিলে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে আনে পুলিশ।

ছবি: মায়ের কোলে উদ্ধার নবজাতক।

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে এস আই সুদীপ কুমার গোপ ও এস আই আসওয়াদুর রহমানসহ ওই ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত উপস্থিত ৪ জনকে আটক করা হয়। পরে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে নবজাতটিকে উদ্ধার করে তার প্রকৃত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close