দেশজুড়ে

আসলের মোড়কে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কি নেই এখানে! দেশে বসেই মিলছে নানা ব্র্যান্ডের বিদেশি কসমেটিকস ও খাদ্যপণ্য। আর পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালেই। রাজধানীর চকবাজারেই মিলছে একের ভেতর সব। ছোট-বড় ঘর, কিংবা ফ্ল্যাটেই তৈরি হচ্ছে নকল কসমেটিকস ও খাদ্যপণ্য। আর এসব কসমেটিকস ও সুস্বাদু খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত রং।

রাজধানীর অন্যতম পাইকারী বাজারগুলোতে এখন নকল পণ্যে ছড়াছড়ি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স পণ্য বিক্রিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের ঠকিয়ে আসছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দিন দিন ভেজাল ও নকল পণ্যের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই। নকলের ভিড়ে আসল পণ্য বেছে নেয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোক্তাদের সামনে।

এদিকে নকলের ভিড়ে ক্রেতাদের কাছে বেমানান হয়ে উঠছে আসল পণ্য। ফলে কদর বাড়ছে নকলের। এমনটাই মনে করছেন প্রকৃত বিক্রেতারা। তাদের মতে, এটি হচ্ছে আসল-নকল চিনতে না পারার কারণে। বর্তমানে আসল-নকল চেনাটাও বড্ড দুষ্কর হয়ে উঠেছে। দুই পণ্যের গায়ে রয়েছে একই লেভেল। এতে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারের বেশিরভাগ পণ্য মান-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় আসছে না। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মাত্র ১৮৪টি পণ্যের মান-সনদ দিতে পারে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এতে ক্রমেই ভেজাল ও নকল পণ্যের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।

সম্প্রতি পুরান ঢাকার চকবাজারের মৌলভীবাজার টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকার নকল প্রসাধনী উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ সময় নকল কসমেটিকস বিক্রির দায়ে ৫ জনকে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে নকল পণ্য তৈরি করে দেশে এনে বিক্রি করতো। এছাড়া তারা বিশ্বের নামীদামি কোম্পানির মোড়কের আড়ালে বিক্রি করতো দেশি পণ্য।

তিনি আরো জানান, এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিত পণ্যের কোনটিতেই পাওয়া যায়নি বিএসটিআইয়ের অনুমোদন। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর অন্যতম পাইকারী বাজার কাওরান বাজারে প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন কাইয়ুম হোসেন। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে কিছু ভয়ংকর তথ্য দিলেন তিনি। জানালেন, দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির ভেজাল খাদ্যপণ্য এখানে প্রকাশ্যেই বেচা-কেনা হয়। আর বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন ভেজাল শিশু খাদ্যের বিক্রিও চলছে প্রায় অবাধে।

কাইয়ুম হোসেন জানান, কেউ আসল পণ্য বিক্রি করছে, আবার কেউবা বিক্রি করছে নকল। যারা নকল পণ্য বিক্রি করে তাদের জন্য আমরা কমফোর্ট পাই না। কারণ একটি পণ্যের দাম আছে তিনশ’ টাকা। সেই একই নকল পণ্য দুইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাহলে কাস্টমার কী আমার থেকে পণ্যটি নেব?

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার কসমেটিকস পণ্যসহ নানা ভোজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে উঠেছে, সেটা বলছেন ভোক্তারাও। তাদের মতে, কসমেটিকস পণ্য স্কিন বা চামড়ায় ব্যবহার করা হয়। তাই এমন স্পর্শকাতর পণ্য নিয়ে বিক্রেতাদের জালিয়াতি বা ভেজাল কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ভোক্তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ যদি ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো, তাহলে আমাদের বিভিন্ন ভেজাল পণ্য নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। এমন পরিস্থিতিতে নজরদারি বৃদ্ধিসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নির্ধারিত কয়েকটি পণ্যের মান সম্পর্কে ভোক্তারা নিশ্চিত হতে পারলেও অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে তা একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিএসটিআই কার্যক্রমকে আরো জোরদার ও গতিশীল করার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন তিনি।

এদিকে ভেজাল ও নকল পণ্যের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছে বিএসটিআই। এ সময় জেল-জরিমানাও করা হয়। কিন্তু নকলের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই কমছে না। এজন্য কিছু সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন বিএসটিআই এর পরিচালক (মান) নিলুফা হক।

তিনি বলেন, সচেতনতা বেড়েছে, কিন্তু ভেজালও বেড়ে গেছে। প্রচুর ভেজাল পণ্য ধরা পড়ছে। তবে এতো বেশি আমাদের করাপশন, আসলে বিএসটিআইর একার পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভেজালরোধে সাধারণ ভোক্তাদের আরো সচেতন হতে হবে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close