জীবন-যাপন

ঈদুল আজহার গুরুত্ব!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ঈদুল আয্হা অর্থ কোরবানির ঈদ। কোরবানির শব্দমূল কুর্ব শব্দের অর্থ নৈকট্য, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে যা কিছু কোরবান বা উত্সর্গ করা হয় সেটাই কোরবানি। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি (সূরা হজ্জ: আয়াত ৩৪)। বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম কোরবানির ঘটনা ঘটে একজন নারী পাওয়াকে কেন্দ্র করে। হযরত আদম আলায়হিস্ সালামের বিবি হযরত হাওয়া ‘আলায়হাস সালামের গর্ভে প্রতিবছর এক পুত্র ও এক কন্যা জন্ম গ্রহণ করতেন। তখন এক যমজের পুত্রের সঙ্গে অন্য যমজের কন্যার বিয়ে দেবার রীতি ছিলো। হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম তাঁর পুত্র হাবীলকে অন্য এক পুত্র কাবিলের যমজ বোন আকলিমার সঙ্গে রীতি অনুযায়ী বিয়ে দিতে চাইলে কাবিল বেঁকে বসলেন, তিনি নিজ যমজ বোনকে বিয়ে করতে চাইলেন। তখন হযরত আদম (আ) দুই পুত্রকেই কোরবানি দিতে বললেন এই বলে যে, যার কোরবানি আল্লাহ কবুল করবেন তার সঙ্গে আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে। তখন হাবীল পাহাড়ের উপর একটি দুম্বা রেখে দিলেন কোরবানির নিয়তে আর কাবিল রাখলেন কিছু শস্য। আকাশ থেকে বজ্রপাত হয়ে হাবীলের রেখে আসা দুম্বা ভস্মীভূত হলো। এতে বোঝা গেলো আল্লাহ হাবীলের কোরবানি কবুল করেছেন। তখন কাবিল ক্রোধে তার বিশ বছর বয়স্ক ভাইকে পাথর মেরে হত্যা করলেন। এটাই মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে শোনাও। যখন তারা  উভয়েই কোরবানি করেছিলো, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কবুল হলো না (সূরা মায়িদা: আয়াত ৫)।

ঈদুল আজহার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহীম ‘আলায়হিস্ সালাম কর্তৃক স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে নিজের পুত্র হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালামের কোরবানির ঘটনা স্মারক হিসেবে। কুরআন মজীদে সেই কোরবানির ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে (সূরা আস-সাফ্ফাত: আয়াত ১০১-১০৮)।
হযরত ইব্রাহীম ‘আলায়হিস্ সালাম পুত্রের বদলে একটা দুম্বা কোরবানি দিয়েছিলেন। আর সেই কোরবানির চেতনা ধারণ করে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালিত হয়ে আসছে সেই তখন থেকেই। এই কোরবানি হজ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ৯ জিলহজ্ব আরাফাত ময়দানে হাজীগণ সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে সূর্যাস্তের পরপরই তিন মাইল পূর্বদিকে অবস্থিত মুযদালিফায় এসে অবস্থান করেন এবং সকালে এখান থেকে তিন মাইল পূর্বদিকে অবস্থিত মিনাতে এসে পশু কোরবানি দেন এবং ইহ্রাম মুক্ত হন। এই ১০ জিলহজ্বকে বলা হয় ইয়াওমুন্ নহর। সারা মুসলিম দুনিয়ায় এই দিন পালিত হয় ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। এই কোরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং তাকওয়া অর্জন করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহর নিকট পৌঁছে না ওগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশ্ত এবং রক্ত, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (সূরা হজ: আয়াত ৩৭)।
এই কোরবানির সময় ধ্বনিত হয়: নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্য।

[লেখক: পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (স), সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close