দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

‘একদিন খালেদ জানান, শেখ হাসিনার বাসভবনে তিনিই গুলি চালান’

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট কমিটিতে সন্ত্রাসীদের জায়গা দিতে পছন্দ করতেন। এমন অভিযোগ অনেকের। এভাবে ধীরে ধীরে যুবলীগকে তিনি সন্ত্রাসীদের ক্লাবে পরিণত করেছিলেন। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সম্রাট তাঁর এই সন্ত্রাস থিউরিতে সফল হলেও বড় ক্ষতি হয়ে গেল দলের। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতারা চলে গেছেন আড়ালে।

যুবলীগের এক নেতা আক্ষেপ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলছিলেন, ‘হঠাৎ একদিন দেখলাম একটি নতুন ছেলে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এলেন। তখনই জানতে চাইলাম কে এ? একজন জানালেন, এর নাম খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। পরিচিত হই খালেদের সঙ্গে। কথায় কথায় একদিন খালেদ জানান, ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবনে তিনিই গুলি চালিয়েছিলেন। এ কথা শুনে আঁতকে উঠি। বিষয়টি জানাই সম্রাটকে, যেন খালেদ যুবলীগে ঢুকতে না পারেন। কিন্তু ফলাফল হয় উল্টো। একপর্যায়ে আমার অবস্থানই নড়বড়ে হয়ে পড়ে। খালেদকে লুফে নেন সম্রাট। সম্রাটের বদান্যতায় খালেদ হয়ে যান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খাজা মোহাম্মদ মোহসিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ২০১৩ সালের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য প্রত্যাশী ছিলাম। সম্রাটের কাছে সিভিও জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে খালেদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করেন। আমি ১৯৯২ সাল থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতি করে আসছি। অথচ ওই কমিটিতে আমাকে বঞ্চিত করা হলো।’

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে ২০০১ সালের পর বিএনপি সরকারের আমলে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তাঁকে ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কমিটিতে রাখা হয়নি। শেষে দুঃখ-ক্ষোভে ঢাকার রাজনীতি থেকে সরে চলে যান নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। বর্তমানে তিনি নবীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান।

গতকাল মনিরুজ্জামান মনির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ওদের যুবলীগ (সম্রাটদের) ছিল আওয়ামী লীগকে ডোবানোর লীগ। যাঁরা শিক্ষিত, তাঁদের কমিটিতে রাখেনি। যাঁদের সন্ত্রাস করার রেকর্ড রয়েছে তাঁদের কমিটিতে নিয়েছেন সম্রাট।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৩ সালে যুবলীগের যে কমিটি গঠন করা হয়, আমিও সিভি জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কমিটিতে যাঁদের নাম দেখলাম, সেখানে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’

যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ফাইল ছবি

নাম প্রকাশ না করে আরেক যুবলীগ নেতা বলেন, নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের পছন্দ করতেন না সম্রাট। তাঁর পছন্দ ছিল সন্ত্রাসীদের। তাঁর চাওয়া ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগকে সন্ত্রাসীদের ক্লাবে পরিণত করা। যে কারণে সৎ জীবনযাপন করা অনেক যুবলীগ নেতা চলে গেছেন রাজনীতির আড়ালে। আর এই সুযোগে খালেদ, আরমানদের উত্থান হয় যুবলীগে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পরামর্শ অনুযায়ী সম্রাট যুবলীগের পদ-পদবি ভাগাভাগি করতেন বলে তথ্য মিলেছে।

অন্যদিকে গত মঙ্গলবার রমনা থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের দুটি মামলায় সম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মামলা র‌্যাবে হস্তান্তর করায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী আরমানকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে র‌্যাব-১ তাদের হেফাজতে নেয়। সম্রাট নিজেকে অসুস্থ দাবি করায় র‌্যাব সতর্কতার সঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিনেও জিজ্ঞাসাবাদের আগে চিকিৎসক তাঁর চেকআপ করেছেন।-কালের কণ্ঠ

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close