তথ্যপ্রযুক্তি

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে সন্ধান মিলল সবচেয়ে পুরোনো ব্ল্যাকহোলের

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ইতিহাসের সবচেয় শক্তিশালী টেলিস্কোপ। এটা স্থাপন করা হয়েছে মহাকাশে, সূর্যের কক্ষপথে। স্থাপনের পর থেকেই একের পর এক চমক দেখিয়ে আসছে এই নভোটেলস্কোপটি। এই তালিকায় যুক্ত হলো পুরোনো একটি ব্ল্যাকহোল।

সদ্য আবিষ্কৃত এই ব্ল্যাকহোলটিকে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরোনো ব্ল্যাকহোল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যের চেয়ে ষোল লক্ষগুণ ভারী এই ব্ল্যাকহোলের বয়স প্রায় মহাবিশ্বের বয়সের কাছাকাছি, যেখানে মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। এই ব্ল্যাকহোলটি নক্ষত্র অর্থাৎ তারাদের জন্মের বিষয়ে আরও নিখুঁত তথ্য দেবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

মহাবিশ্ব এমন এক জায়গা, যেখান থেকে সহজেই অতীত খুঁড়ে বের করা যায়।

অর্থাৎ এখান থেকে কোনো তথ্যই আসলে হারায় না। যে নক্ষত্রের জন্ম ১০০ কোটি বছর আগে, সেই নক্ষত্রটির জন্ম প্রক্রিয়াও এই মুহূর্তে দেখা সম্ভব, যদি নক্ষত্রটির দূরত্ব আমাদের থেকে ১০০ কোটি আলোকবর্ষ হয়।
কীভাবে?

এর উত্তর জানতে হলে বুঝতে হবে আলোকবর্ষ কী?

আলো এক বছরে যতটুকু দূরত্ব পাড়ি দেয়, তাকে বলে এক আলোকবর্ষ। আলোকবর্ষ দূরত্বের একক; সময়ের নয়।

১০০ কোটি আলোক বর্ষ দূরে যে নক্ষত্র আছে, সেখান থেকে আলো আসতে সময় লাগে ১০০ কোটি বছর। তাই নক্ষত্রটি যদি ১০০ বছর আগে জন্ম নেয়, সেই জন্মপ্রক্রিয়া আমরা এখন দেখতে পাব।

জেমস ওয়েবের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা অনেক পুরোনো সব মহাজাগতিক ঘটনার অনুসন্ধান করেন। এমনকী ১৩৮০ কোটি বছর আগে যখন মহাবিশ্বের জন্ম হয়, সেই মূহূর্তের অনেক ছবিও দেখা সম্ভব এর সাহায্যে। সেই চেষ্টা অবশ্য বিজ্ঞানীরা করে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি জেমস ওয়েবের সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা টেলিস্কোপটির মুখ ঘুরিয়ে ছিলেন মহাকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে। সেই অঞ্চলে ৪৫০ কোটি বছর আগে একটি শিশু গ্যালাক্সির জন্ম হয়। গ্যালাক্সিটির নাম জিএন-জেড১১ (GN-z11)।

মজার ব্যাপার হলো, এই গ্যালাক্সিটির দূরত্ব আমাদের থেকে ৪৫০ কোটি আলোকবর্ষ। তাই চার শ কোটি বছর আগে, ওখানকার অবস্থা কেমন ছিল, সেটা এখন টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা সম্ভব। আর সেই কাজটি করতে গিয়েই ব্ল্যাকহোলটির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটা একটা সুপ্যারম্যাসিভ বা অতিভরের ব্ল্যাকহোল। এটা জিএন-জেড১১ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। আসলে প্রায় সব গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটা করে অতিভরের ব্ল্যাকহোল থাকে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালক্সির কেন্দ্রেও রয়েছে একটা সুপারম্যাসিভ বা অতিভরের গ্যালাক্সি, যার নাম স্যাজিট্যারিয়াস এ স্টার।

গ্যালাক্সির বয়স ৪৫০ কোটি বছর হলেও, এর কেন্দ্রের ব্ল্যাকহোলটির বয়স অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এ ধরনের গ্যালাক্সির জন্ম মহাবিশ্বের জন্মের প্রায় ১০ কোটি বছর পর। অর্থাৎ এই সময় শিশু মহাবিশ্ব সত্যিকারের রূপ লাভ করেছিল।

এ ধরনের ব্ল্যকহোল নেওয়ার পর সেটা কীভাবে এত দ্রুত বেড়ে উঠে, অনেকটা বেলুনের রূপ নিয়েছিল, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। এর উত্তর জানাতে পারে প্রাচীন এই ব্ল্যাকহোলগুলি। বিশেষ করে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল, যেগুলি সমগ্র মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বাস করে। এই ব্ল্যাকহোলগুলির কারণে নক্ষত্রগুলিকে গ্যালাক্সি ধরে রাখতে পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী arXiv-এ একটা প্রকাশ করেছেন, প্রিপ্রিন্ট আকারে। গবেষণাপত্রটি এখনো পিয়ার রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষায় আছে। গবেষক দলটির প্রধান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্তো মাইয়োলিনো বলেছেন, ‘বর্তমানের মতো মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার ব্ল্যাকহোলগুলির ধীরে ধীরে বা শান্তভাবে বেড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। অবশ্যই এদের জন্মপ্রক্রিয়া ও বেড়ে ওঠার ব্যাপারটি ঘটেছিল তড়িৎগতিতে। অর্থাৎ জন্মপ্রক্রিয়াটাই ছিল অদ্ভুত।’

এ যুগের গবেষকরা মনে করেন, বিশালাকার নক্ষত্রগুলো মৃত্যুর পরে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। জন্ম যেভাবেই হোক, গঠনের পর একটা ব্ল্যাকবহোল এর চারপশে থাকা ধূলিকণা, গাসীয় পদার্থ, নুড়ি পাথর, অন্যন্য নক্ষত্র এমনকী ব্ল্যাকহোলকেও গ্রাস করে নিজে বেড়ে ওঠে। যা-ই গ্রাস করুক, ব্ল্যাকহোলের বাইরের অ্যাক্রেশন ডিস্কটা রশ্মি বিকিরণ করে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই উজ্জ্বল বিকিরণই টেলিস্কোপের সাহায্যে শনাক্ত করা যায়।

নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের দুটি ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন। মিড-ইনফ্রারেড যন্ত্র (MIRI) এবং নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা। ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত স্পেকট্রোগ্রাফে সেই আলোর বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

আলোক রশ্মিতে থাকা কম্পাংক বিশ্লেষণ করে কিছু অন্যরকম কমাংক খুঁজে পেয়েছেন। কম্পাংকের ধরন দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছন, এগুলো ব্ল্যাকহোলের চারপাশের উত্তপ্ত অঞ্চল থেকে আসছে। এভাবেই আসলে হদিস মিলেছে নতুন এই ব্ল্যাকহোলটির।

এখন প্রশ্ন হলো, আদীম এই ব্ল্যাকহোলগুলি কীভাবে তৈরি হলো। তখন বড় কোনো নক্ষত্রও ছিল না যে সেগুলোর মৃত্যুর পর এই ব্ল্যাকহোললগুলি তৈরি হবে। তাহলে?

এ বিষয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মত হলো, নক্ষত্র না থাকলেও প্রচুর ধূলিকণা ছিল। ধূলিকণার মেঘ ছিল। সে সব ধূলিকণার মেঘের আকস্মিক পতন থেকেই সরাসরি তৈরি হয়েছে প্রাথমিক ব্ল্যাকহোলগুলি।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close