বিশ্বজুড়ে

খোলার রাতেই বন্ধ সৌদির ‘হালাল নাইটক্লাব’

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সৌদি আরবের জেদ্দায় অ্যালকোহলমুক্তি ‘হালাল নাইটক্লাব’ খোলার খবরটি বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ এই নাইটক্লাবের অনুমোদন বাতিল করেছে। কারণ এটা দেশটির আইন বহির্ভূত বিষয়।

দুবাই এবং বৈরুতে দুটো ভেন্যু পরিচালনা করে ‘হোয়াইট নাইটক্লাব’ যেগুলো লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তাদের জেদ্দায় আরেকটি শাখা খোলার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।

এর উদ্বোধনে ক্লাবের পথেই ছিলেন গায়ক এবং গীতিকার নে-ইয়ো। বাতিলের পর তিনি নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে দুঃখও প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি জানান, সৌদির আরবের মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি ভেন্যুর পথেই ছিলাম। তবে জানলাম কৌশলগত কারণে এটা বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে পারফর্ম করতে যাচ্ছিলাম। হোয়াইট জেদ্দার মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

জেদ্দায় নে-ইয়োর পারফরমেন্স উপভোগের টিকিটও ছাড়া হয়েছিল। এর দাম ছিল ৫০০ থেকে এক হাজার সৌদি রিয়েলের মধ্যে। এই নাইটক্লাবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল পোশাকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা আসতে পারবেন বলে নিয়ম করা হয়।

দুবাই-ভিত্তিক অ্যাডমিন্ড হসপিটালিটি গ্রুপ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড পরিচালনা করে যার মধ্যে একটি ‘হোয়াইট নাইটক্লাব’। তারা ইন্ডি রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড লাউঞ্জ, ইতালিয়ান কিচেন মাটো, রুফটপ লাউঞ্জ আইরিশ, দ্রাইস বিচ ক্লাব এবং এমন আরো অনেকগুলো ভেন্যু পরিচালনা করে।

এর সিইও টনি হাব্রি গত এপ্রিলে অ্যারাবিয়ান বিজনেসকে বলেছিলেন, সৌদিতে যে ‘হালাল নাইটক্লাব’ খোলা হবে তা আসলে এক ‘উচ্চ সুবিধাসম্পন্ন ক্যাফে’।

সৌদির বিনোদন খাতের কর্তৃপক্ষ টুইট বার্তায় জানায়, এটা খোলার জন্যে কোনো লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি। তা ছাড়া এটি ‘আইনের লঙ্ঘন’ও বটে। সেখানে আরো বলা হয়, ভিন্ন একটি বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ঠিকাদার তাদের লাইসন্সের মেয়াদ বৃদ্ধির যে আবেদন করেছে, তারই ‘বাড়তি সুবিধা’ নিতে চেয়েছিল এই পথে।

জেদ্দায় ‘হালাল নাইটক্লাব’ খোলার খবরটি সৌদিবাসীদের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কেউ কেউ এই ক্লাবের নাচগানের আয়োজনের নিন্দা জানান। আবার কেউ ‘হালাল বার’কে স্বাগত জানান।

এটা চালুর ঘোষণার পর থেকে সরগরম হয়ে ওঠে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্কও সৃষ্টি হয়। টুইটারে অনেকে লেখেন, সৌদির এমন কর্মকাণ্ড দেশটির ইসলামিক চিন্তাধারা ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। আবার কেউ লেখেন, হালাল নাইটক্লাবে আসলে কি কি করা যাবে, এটা হাস্যকর। এছাড়া অনেক সামাজিক ব্যবহারকারী হালাল নাইটক্লাবের ব্যঙ্গ করে অনেক ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করেন। কেউ কড়া সমালোচনা করে লিখেছেন, এটা ইসলামের সংস্কার নয়, এটা অবক্ষয়। ইসলামের ক্ষতি করে এমন কর্মকাণ্ড আমরা মেনে নিতে পারি না। তবে নাগরিকদের সমালোচনা ও অসন্তুষ্টি থাকলেও দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।

হাব্রি এপ্রিলেই বলেছিলেন যে, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বিভাগ জেদ্দায় আইরিশ লাউঞ্জের সব কাজ শেষ করে এনেছে। এটা আসলে ক্যাফের একটি সংস্করণ। এর ছাদের ওপরের অংশে গানবাজনা চলবে এবং সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার দেয়া হবে। ক্যাফের ক্ষেত্রে রুফটপ, আউটডোর এবং ইনডোর- এটা জেদ্দার বাজারের বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এমন আয়োজন দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সৌদির বাজার দারুণ এক জায়গা। কারণ স্থানীয়রা বাইরে বেরোতে পছন্দ করে, যোগ করেন তিনি।

এর আগে এই ‘হালাল নাইটক্লাব’ নিয়ে যে খবর বেরোয় সেখানে বলা হয়, বিলাসবহুল এই নাইটক্লাবে ক্যাফে এবং লাউঞ্জ থাকবে। এতে ওয়াটারফ্রন্ট থাকবে, এর সাথে থাকবে বিশ্বের খ্যাতনামা মিউজিক গ্রুপের পরিবেশনা। ইলেক্ট্রনিক ডান্স মিউজিক, কমার্সিয়াল মিউজিক, আরএনবি এবং হিপহপ মিউজিক উপভোগ করা যাবে এখানে। এই হালাল নাইটক্লাবের লাউঞ্জের একটি অংশে থাকবে ড্যান্স ফ্লোর। নারী পুরুষ সবার জন্যে ড্যান্স এটা উন্মুক্ত থাকবে। হোয়াইটের সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই এখানে পাওয়া যাবে। তবে এই নাইটক্লাবে মদ পাওয়া যাবে না। কারণ সৌদিতে মদ কেনাবেচা অবৈধ।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close