দেশজুড়ে

জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পাচ্ছে ‘আপন ঠিকানা’

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ অবশেষে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের প্রায় ৩০ বছরের কষ্টকর জীবনের অবসান হচ্ছে। বস্তির খুপরি ঘর ছেড়ে আজ তারা উঠছেন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফ্ল্যাটে। ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পাচ্ছে ‘আপন ঠিকানা’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মস্তিষ্কপ্রসূত উদ্ভাবন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ আওতায় কক্সবাজারে এই পরিবারগুলোকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। মাত্র ১ হাজার ১ টাকা মূল্যে তাদের উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটবে আজ। ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ সকালে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আশ্রয়ণ-২ নামে এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার ঠিকানা পাবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বাস্তুহারা মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশে সরকারি খাস জমিতে। কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুল এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে এই ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’। পুরো এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা।


এ প্রকল্পের আওতায় খুরুশকুলে এরই মধ্যে ২০টি ভবন নির্মাণ হয়েছে। এই ভবনগুলোতে আজ ৬০০ উদ্বাস্তু পরিবারকে ফ্ল্যাট বিতরণ করা হবে। দেশের আবহমান বাংলার প্রকৃতি এবং কক্সবাজারের নানা স্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব ভবনের নামকরণ করেছেন। ভবনগুলোর নাম হচ্ছে- সাম্পান, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, দোলনচাঁপা, ইনানী ও বাঁকখালী। এ ২০টি ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনুষ্ঠানস্থলে সাজসজ্জাসহ সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্মিত ভবনগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের লাইন সংযোগসহ করা হয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এটি বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প। এ ধরনের প্রকল্প বিশ্বে বিরল।

যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকছে প্রকল্পে : কক্সবাজার শহর থেকে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার জন্য প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ভিতরের রাস্তা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নদীর পাশে ৭ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রকল্প এলাকায় থাকবে ফায়ার স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি। প্রতিটি ভবনের ওপর সৌর বিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা হবে। সুপেয় পানির জন্য ১০টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। স্কুল তৈরি করা হয়েছে। প্রচুর তালগাছ ও ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। এখানে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে আধুনিক পর্যটন জোন। এ ছাড়া ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে। প্রকল্পের সব ভবন পাঁচতলা হলেও একটি ভবন হবে দশতলা। এর নাম হবে শেখ হাসিনা টাওয়ার। এই ভবনের অবস্থান হবে পর্যটন জোনে। ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, ঘাটলা ও খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা হবে। যারা ফ্ল্যাট পাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী। যে কারণে সেখানে একটি শুঁটকি মহালও থাকবে। এখানে বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তোলা হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ইতিকথা : ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙনকবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সমন্বিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর বানিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এ প্রকল্পের আওতায়। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প শুরু হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবার ঘর পেয়েছে। অন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হয়েছে পাকা ও আধা পাকা দালানের ব্যারাক আকারে। খুরুশকূলের আশ্রয়ণ প্রকল্পেই প্রথম বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close