প্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য

জাবিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান দুর্নীতি, অপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল শেষে হলে ফিরে গেলে, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে নির্যাতনের শিকার হন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সোহায়েব ইবনে মাসুদ।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আল বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান সরকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী বলে জানা যায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সোহায়েব ইবনে মাসুদ জানান, গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করনে। মিছিল শেষে রাতে হলে ফেরেন। পরে রাত ১২টার দিকে অভিযুক্ত সাইফুর রহমান মাসুদের পরিচয় এবং মিছিলে যোগ দিয়েছিল কিনা জানতে চান।

পরে মশাল মিছিলে যাওয়ার কারণ জানতে চান সাইফুর। উত্তরে তিনি বলেন ‘দাবিগুলো যৌক্তিক তাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি।’

সোহায়েব আরও বলেন, ‘আমি তিনটা দাবির কথা বলি এর মধ্যে একটা দাবি হলো প্রকল্পের টাকা দুর্নীতির বিচার করা। এসময় সাইফ বলেন যে, দুর্নীতি হইলে দুর্নীতির তদন্ত হবে। তুই কেন মিছিলে গেছিস? আমি উত্তর করতেই তার সামনে থাকা পানিভর্তি বোতল আমার দিকে ছুঁড়ে মারেন। বোতলটি এসে আমার বুকে লাগে। এরপর সে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার বুকের আঘাত করে এবং আমার কলার টেনে ধরে শার্টের বোতাম ছিঁড়ে ফেলেন।’

তবে এ ঘটনা প্রথম নয় বরং এর আগেও কয়েকজনের সঙ্গে এমন ঘটেছে বলেও জানান তিনি।

ঘটনার বিচার দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

উল্লেখ্য, এর আগেও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের প্রথম বর্ষের (৪৮ তম ব্যাচের) শিক্ষার্থীদের র‍্যাগ দেওয়ার সময় অভিযুক্ত সাইফুর রহমানকে হাতেনাতে ধরেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

পরবর্তীতে ঘটনার পরের দিন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করে সিন্ডিকেট বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। সুপারিশের প্রেক্ষিতে সাইফুর রহমান সহ ৪৭তম ব্যাচের ৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন ‘বন্ধ করতে’, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় প্রয়োজনে আন্দোলন বন্ধ করতে শিক্ষার্থীদের ‘মারধর’ করার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

এদিকে এ ‘বিশেষ নির্দেশের’ পর আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বলে জানান অপর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যুক্তিতে হেরে গিয়ে পেশি শক্তির ব্যবহার করছেন। আমরা জানতে পেরেছি ছাত্রলীগের সঙ্গে মিটিং করার পর থেকে বিভিন্ন হলে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই হুমকি ধমকি দিয়ে কোন যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে পারবেন না।’

তবে বিশেষ নির্দেশনার কথা অস্বীকার করে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা হলের সিট সমস্যা নিরসনের লক্ষে আলোচনা করার জন্য ছাত্রলীগের সঙ্গে বসেছিলাম। অন্যকোন কারণে নয় কিংবা তাদেরকে কোন বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

আল বেরুনী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি মারধরের ঘটনা সম্পর্কে জানতাম না, মাত্র শুনলাম। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমি জেনেছি, যেহেতু এটা হলের আভ্যন্তরীণ বিষয় আমি হল প্রভোস্টকে জানাতে বলেছি। হল প্রভোস্ট আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।’

আরকে/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close