প্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য

জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্নহত্যার চেষ্টা

জাবি প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রী। লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

গেলো সোমবার রাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছাত্রী অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম সানোয়ার সিরাজ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

এদিকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় ছাত্রী। যেখানে বলা হয়েছে, ছাত্রীকে দীর্ঘ দেড় বছরে ধরে নানা কৌশলে যৌন হয়রানি করে আসছিলো অভিযুক্ত ঔই শিক্ষক।

বিভাগীয় সভাপতি বরাবর দায়ের করা অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও তৃতীয় বর্ষে সানোয়ার সিরাজের কোর্সে কম মার্কস পাই। ফলশ্রুতিতে আমি ওই কোর্স মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে চাই। আর এজন্যই আমি সানোয়ার সিরাজের শরণাপন্ন হই। এ সময় তিনি আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখেন। তিনি আমাকে বলে রাখেন, যেকোনো কারণে যেন যোগাযোগ করি।’

‘পরীক্ষার দিন (গত বছরের ১২ মার্চ) তিনি ফোন করেন। পরীক্ষা কেমন হলো জানতে চান। এরপর ওই রাতেই তিনি আবারও ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন এবং আমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হঠাৎ করে তার এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে আমি বিভাগে গিয়ে তার কাছে জানার চেষ্টা করি যে, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেন যে আইডি হ্যাক নয় বরং তিনিই এই মেসেজ প্রদান করেছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন যে, আমার প্রতি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন, আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চান, ঘুরতে চান। আমি ধারাবাহিকভাবে সানোয়ার সিরাজের এমন আচরণে খুব বিব্রত ছিলাম ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করছিলাম। কিন্তু তিনি রেগুলার আমাকে উত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন।’

‘আমি এ ঘটনার জন্য সানোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করি। কিন্তু আসন্ন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কারণে এই মুহূর্তে অভিযোগ না দেওয়ার জন্য অনেকে আমাকে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় আমি সানোয়ারের আচরণে হতাশ হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে তিনি আমাকে আবার কল করে ড্রেস গিফট করা, ঢাকা এবং সাভারের রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং স্ত্রীর অনুপস্থিতে তার বাসায় রাত যাপন করার প্রস্তাব দেন। এ সময় তিনি আরও কিছু অশালীন কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। আমি তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একাধিক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হই।’

পরে লিখিত অভিযোগটি সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতির কাছ থেকে গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের অধ্যাপক রাশেদা আখতার জানান, ইতিমধ্যে ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close