শিল্প-বানিজ্য

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে চাপের মুখে নিট খাত, বিকল্প পরিকল্পনার অনুরোধ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে দেশের নিট খাতসহ দেশের সকল খাত চাপের মুখে পড়বে উল্লেখ করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) বিকল্প পরিকল্পনার অনুরোধ জানিয়েছে।

শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেলে সংগঠনের সভাপতি এমপি সেলিম ওসমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বিশ্ব বাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে, ঠিক তখন আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আমাদের হতবাক করেছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে নিঃসন্দেহে রফতানিমুখী শিল্প খাত চাপে পড়বে। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রাণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

জালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের প্রধানতম রফতানিখাত নিট খাতসহ দেশের সামগ্রিক শিল্প খাতে মারাত্মক বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে মনে করে বিকেএমইএ।

বিশেষ করে ডিজেলের দাম ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা (অর্থাৎ প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি) করার সিদ্ধান্তের কারণে এর প্রভাব সরাসরি বিদ্যুৎ, পরিবহন তথা অন্যান্য উপখাতগুলোতে পরবে। যা ফলে নিট বা পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে হ্রাস করবে। ফলে দেশের নিট পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের রফতানি প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা থাকছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসে খাতওয়ারি বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি বলে বিকেএমইএ মনে করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ দুইবছর ধরে করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় এক ধরনের দীর্ঘ শ্লথ প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে, যা থেকে আমরা এখনও বেরোতে পারিনি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে সারা বিশ্বের অর্থনীতি। ফলে পুরো বিশ্বের কাঁচামাল সরবরাহ চেইনে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি নিট সেক্টরসহ দেশের পোশাক শিল্পের ওপর পড়েছে। এ শিল্পখাতটি মূলত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও শ্রমিক এই চারটি দেশীয় উপাদানকে মূল সরবরাহ চেইনে ধরে বাকি সব কাঁচামাল বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করে রফতানি প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এ দেশীয় উপাদানগুলো প্রাপ্তিতে কোনো ধরনের চাপ তৈরি হলে পুরো সেক্টরটিই চাপে পড়ে যায়।

এতে আরও বলা হয়, এমনিতেই বিগত কিছু সময় ধরে আমরা কারখানাতে গ্যাসের প্রবাহ/প্রেসার ঠিকমতো পাচ্ছি না, যা আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। তার ওপর ২০২২-২৩ সালের অনুমোদিত বাজেটে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িযে ১ শতাংশ করায় শিল্প উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে চাপে পড়ে গেছে। এত কিছুর পরেও গত বছর একদফা বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধি এবং মাত্র কিছুদিন আগেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার এবং এ সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের ব্যাপক চাপে ফেলবে জেনেও দেশের স্বার্থে আমরা বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এটিকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপরই একটি মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে, ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানতম রফতানিখাত নিট শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশকে ধরে রাখতে ও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে যে অর্থনৈতিক বোঝা এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের ওপর পড়েছে, তা নিরসনকল্পে জরুরিভাবে আপদকালীন নগদ সহায়তার হার বৃদ্ধি করে, তা সমন্বয়ের অনুরোধ জানাচ্ছে বিকেএমইএ।

/এএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close