দেশজুড়ে

দুর্গতদের পাশে থেকেই বঙ্গবন্ধু স্মরণের প্রত্যয়

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ‘কাঁদো বাংলার মানুষ কাঁদো/যদি বাঙালি হও নিঃশব্দে কাছে এসো, আরো কাছে/…এখানেই শুয়ে আছেন অনন্ত আলোয় নক্ষত্রলোকে/জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/….এখানে ঘুমিয়ে আছে, এইখানে দাঁড়াও শ্রদ্ধায়..।’

বাঙালির ক্যালেন্ডারের বছরের সবচেয়ে কালিমাক্ত মাস আগস্ট। একাত্তরের বংশীবাদক শেখ মুজিবের খুনে রক্তাক্ত মাস। আগস্টের বেদনায় আকাশের চোখ বেয়ে যেন কান্না নামে। শ্রাবণ ঢলে ভেসে যাওয়া কীর্তিনাশা নদীর মতোই শোকের স্রোতে আপ্লুত হয় বাঙালির হৃদয়। আগস্ট হয়ে ওঠে একটি শোকের কবিতা। যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর রক্তে হাত রাঙিয়েছে, সে বর্ষাস্নাত হয়ে পাপমুক্ত হতে চায়। শুদ্ধ হতে চায় দুই চোখের জলে।

শোকের আগস্ট। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাস। ঠিক ৪৫ বছর আগে বাঙালির কপালে পিতৃহন্তারকের কলঙ্ক তিলক লেপনের মাস। সাড়ে চার দশক পরও আগস্ট এলে নিষ্ঠুরভাবে পিতা হারানোর শোকে মূহ্যমান হয় জাতি। চোখের জল, বিন¤্র শ্রদ্ধা আর সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে মাসব্যাপী জাতির পিতাকে স্মরণ করা হয়। এবারের শোকের মাস জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ হওয়ায় নানা অনুষ্ঠান-আয়োজনে পালন করার কথা ছিল। কিন্তু বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ এর ভয়ংকর মহামারির কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে শোকের মাস পালন করবে জাতি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এই নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয়প্রধানের নির্দেশে করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সারাদেশে শোকাবহ আগস্টের কর্মসূচি পালনের আহবান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

শোকের মাসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও

জাতীয় শোক দিবস পালন। ওইদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো এবং ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে চলমান বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ও ত্রাণ বিতরণ করা হবে। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়া যাবে। এছাড়া ৫ আগস্ট জাতির পিতার জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস পালন করবে আওয়ামী লীগ।
একদিকে করোনা মহামারি এবং আরেকদিকে বন্যার কারণে শোকের মাসে জনগণের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আলোচনাসহ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

এদিকে করোনা আক্রান্ত ও বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোই শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু গবেষকরা। এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট অত্যন্ত নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। মুজিববর্ষ হওয়ায় এ বছরটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু বিশ^জুড়ে করোনা প্যানাডেমিকের কারণে মানুষের জীবন হুমকির মুখে। বিশে^ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। স্বাভাবিকভাবে জাতির পিতার শোকের মাসের বৃহৎ কর্মযজ্ঞের সীমিত করা হয়েছে। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে এখন করোনা ও বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। এটিই তার রাজনীতি, আদর্শ এবং শিক্ষা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্যই রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ আমাদের সবার উচিত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নেয়া। ভয়ংকর সময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হবে বঙ্গবন্ধুকে সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদন। তিনি বলেন, শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাবলিককেশন করা যায়।

অন্যদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা, বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ওবায়দুল কাদের বলেন, সব প্রতিক‚লতাকে মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনের পাশাপাশি জীবিকা রক্ষার জন্য মানুষের কল্যাণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগস্ট জাতির জন্য হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পর্শী মাস। মুজিববর্ষ হওয়ায় এবারের শোকের মাস জাতির জন্য অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। দুর্ভাগ্য, এই মাসটি যখন পালন করতে যাচ্ছি একদিকে করোনা, অন্যদিকে বন্যা। করোনার কারণে আগেই আমরা সব কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। কর্মসূচি সীমিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। দলের নির্দেশ, শোকের মাসে করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং আর্থিক অসচ্ছল মানুষের সহায়তা করা। এতে বঙ্গবন্ধুর আত্মা বেশি শান্তি পাবে। তিনি বলেন, শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের দিন আমরা সবাই যেন জাতির পিতাসহ পনের আগস্টে নিহতদের জন্য দোয়া করি।
/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close