স্থানীয় সংবাদ

যে তিন কারনে আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আশুলিয়ার পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। শ্রমিকদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের ধরতে কাজ শুরু করেছে তারা। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের সদর দপ্তরে পাঠিয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১।

আশুলিয়া থানা সূত্র মতে, শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মালিকপক্ষ বাদী হয়ে গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯টি মামলা করেছে।

বেশির ভাগ মামলায় আসামি অজ্ঞাত। একটি মামলায় এজাহার নামীয় ১৫ জন আসামি উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

পোশাক কারখানার শ্রমিক, নেতা, কারখানা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মিছিল চলার সময় আশুলিয়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের প্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। প্রথমে একটি কারখানা, ধীরে ধীরে বাকি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, বেরন ও কাঠগড়া এলাকার শতাধিক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।

এর মধ্যে সড়ক অবরোধ করার ঘটনাও ঘটে। কারখানায় হামলা-ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ২০ কারখানা। শ্রমিকসহ আহত হন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। হামলা থেকে রেহাই পাননি বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তারাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প ও থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।

পরে এই এলাকার প্রায় ৮০টি কারখানা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ১২ নভেম্বরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের কয়েক দিন আগে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়।

এই আন্দোলনের ব্যাপারে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘২৮ অক্টোবর আশুলিয়ার নরসিংহপুরে সেতারা নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রথমে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কাজ ছেড়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর রোজ কারখানার শ্রমিকরা বেরিয়ে যায়। এভাবে ধীরে ধীরে আশপাশের সব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। হাফপ্যান্ট কিংবা কোয়ার্টার প্যান্ট পরে যারা ভাঙচুর চালিয়েছে তারা তো পোশাক শ্রমিক হতে পারে না। আমরা দেখেছি তারা কারখানায় ঢিল দিচ্ছে, কেউ না কেউ তাদের মদদ দিচ্ছে। আমরা শ্রমিক নেতারা এর সঙ্গে জড়িত নই। তবে কেউ জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনুক, এটা আমরাও চাই।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকদের ছদ্মবেশে বিভিন্ন কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কিশোর গ্যাংসহ অনেকেই শ্রমিকের ছদ্মবেশে হামলা চালিয়েছে। আমরা চাই, তাদেরসহ ইন্ধনদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।’

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়, চীনের পরেই আমাদের স্থান। কোনো কারণে যদি এই শিল্পটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায় তাহলে অর্ডারগুলো অন্য দেশে যাবে। এটি একটি কারণ হতে পারে। একই সঙ্গে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবারের কেউ কেউ শ্রমিক নেতা হয়ে গেছেন। সেই শ্রমিক নেতারা আবার শ্রমিকদের উসকানোর চেষ্টা করছেন, শ্রমিকদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তৃতীয় কারণ হলো, কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক থেকেই থাকে। তাদের মধ্যে আবার বেতন কাঠামো নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয় কিছু বিষয় স্বচ্ছ না করার কারণে। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে শ্রমিকরাও বুঝতে পেরেছেন যে গ্রেড আকারে সবার বেতনই বেড়েছে। বেশির ভাগ শ্রমিক নতুন বেতন কাঠামো নিয়েছেন। তাঁরা এতে সন্তুষ্ট। এখন পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক।’

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close