দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

নিষ্পাপ চেহারার আড়ালে ভয়ংকর প্রতারণায় লিপ্ত “বাবা-ছেলে”

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ নিষ্পাপ চেহারার আড়ালে ভয়ংকর প্রতারণায় লিপ্ত গোলাম মোস্তফা আদর ও তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু। তাদের প্রতারণার কাহিনি শুনলে গায়ের লোম দাঁড়ানোর অবস্থা। সরকার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য দেখিয়ে প্রতারণা করা বাবা-ছেলের কাছে ডাল-ভাত। নিষ্পাপ চেহারার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন তারা। এবার তাদের প্রতারণার শিকার খোদ রাজশাহী রেঞ্জের এসপি বেলায়েত হোসেন। প্রতারক বাবা ও ছেলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা খোয়ালেন তিনি। আর এতেই বাবা-ছেলে ও তাদের চক্রের ভয়ংকর প্রতারণা বেরিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, এসপি বেলায়েতের কাছে নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির আত্মীয় বলে পরিচয় দেন গোলাম মোস্তফা আদর। এক পর্যায়ে এসপির বদলির তদবির করার আশ্বাসও দেন প্রতারক আদর। ফলে আদরের সঙ্গে এসপি বেলায়েতের সখ্য বেড়ে যায়। আদরের নানা মন ভোলানো কথায় মজে যান এসপি। ধীরে ধীরে এসপি বেলায়েতের সঙ্গে আদরের আরো সখ্য বাড়ে।

হঠাৎ একদিন এসপির কাছে নিজের অসুস্থতার খবর জানান আদর। এ খবর জানানোর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালুর সাক্ষাতের কয়েকটি ছবিও পাঠান এ প্রতারক। ওই সময় এসপির কাছে ১০ লাখ টাকা ধার চান আদর। এসপি মানবিক কারণ ও বদলির আশায় পাঁচ লাখ টাকা আদরকে চেকের মাধ্যমে দেন।

এ ব্যাপারে এসপি বেলায়েতের সঙ্গে আদরের ফোন রেকর্ড পাওয়া গেছে। সেই রেকর্ডে আদর বলছেন, বদলির ব্যাপারে ফোন করানো হয়েছে। সবচেয়ে হাই লেভেলের তদবির হলো আপনারটা। এর ওপর আর কোনো তদবির নেই।

এরপরই পল্টি মারেন গোলাম মোস্তফা আদর। এসপিকে নানা কারণ দেখিয়ে টাকা ফেরত না দেয়ার বাহানা শুরু করেন।

এসপি অভিযোগ করে বলেন, টাকা ফেরত চেয়েছি। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে আদর ঘুরাচ্ছে। লকডাউনসহ ভিন্ন কথার অজুহাতে সে সময় চায়। এক পর্যায়ে হুমকি দেয়া শুরু করে। আদর বলে-আপনার ফ্যামিলি ঢাকায় থাকে, আপনার বাচ্চারা ঢাকায় পড়াশোনা করে, আপনি কি বুঝেন না? আপনি নিরাপত্তা চান না? আপনি তো দূরে থাকেন। কি করবেন? আমি টাকা দিতে পারব না।

এসপি বেলায়েত পাঁচ লাখ টাকা ফেরত পাওয়া তো দূরের কথা উল্টো টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারক আদর।

আদরের ভাষ্য, উনি (এসপি) দাবি করছেন আমি এ বছর টাকা নিছি। এ বছর তো আমি অসুস্থ ছিলামই না। আর আদরের বাবার দাবি, বাবা ও ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার।

অন্যদিকে ব্যাংক হিসাব দেখে আদরের কথার সত্যতা মেলেনি। ১৬ মার্চ এসপি বেলায়েতের অ্যাকাউন্ট থেকে আদরই চেকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা তোলেন। আদরের বিরুদ্ধে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো এসপির পরিবারকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য আর নানা হুমকির অভিযোগ উঠেছে।

এসপি প্রতারণার শিকার হতেই শুরু হয় তদন্ত। তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে সাপ। দিন দিন বাবা ও ছেলের প্রতারণার কাহিনী বের হতে থাকে। এমনকি আদর ও তার বাবার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে করা মামলার তথ্যও পাওয়া যায়।

আগে থেকেই নানা প্রতারণা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত হন গোলাম মোস্তফা আদর ও তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু। ২০১৫ সালে উত্তরা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আসিফ ইমরানকে অপহরণ করার পর নারায়ণগঞ্জে খুন করা হয়। সেই খুনের অভিযোগে আদর ও তার বাবার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই সময় সন্তানকে খুনের বদলে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেন খুনের শিকার ইমরানের মা। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে বেকায়দায় পড়ে ইমরানের পরিবারও। উল্টো ইমরানের পরিবারকে তিনটি মামলা দিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। নিহত ইমরানের বাবার অভিযোগ, আদর ও তার বাবা সব সময় প্রতারণাসহ হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ করে বেড়ান।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close