জীবন-যাপন

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ৭২ বছরের বৃদ্ধ খুঁজে পেলেন পাত্রী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ নিঃসঙ্গতা মানুষের জীবনে শুধু হতাশা আর আঁধার এনে দেয়। তবে নিঃসঙ্গতা কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় একজন সঙ্গী। নারী পুরুষ সবার জন্যই বিয়ে হতে পারে সঙ্গী পাওয়ার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তবে অনেকেরই সঙ্গী পেতে সময় পার হয়ে যায় অনেকটা।

৭২ বছর বয়সে বিয়ে করলেন এক বৃদ্ধ। অনেকেই নানা কুমন্তব্য করেছেন তাকে। তবে তার সিদ্ধান্ত বদলাননি। নিঃসঙ্গতা কাটাতে ৭২ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ভারতের শ্রীরামপুরের বড়বাগানের বাসিন্দা, কলেজশিক্ষক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ।

সমরেন্দ্র ২২ বছর রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজে বাংলা পড়িয়েছেন। ২০০৮ সালে অবসর নেন। তার পরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি পূর্ব বর্ধমানের কালনায় বেসরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষ। স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়ে বিদেশে থাকেন। ফলে তাকে একাই থাকতে হতো।

সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সঙ্গীর অভাব বোধ করছেন। ছাত্র-ছাত্রী, পরিচিতরা তাকে রান্না করে দিতেন। তবে লকডাউনের শুরুতে সমস্যায় পড়েন তিনি। দুই দিন কার্যত না খেয়ে কাটাতে হয়। পরে হোম-সার্ভিসের মাধ্যমে খাবার আনাতে হয়। এখন সুস্থ আছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে অসুস্থ হলে একজনকে পাশে চান তিনি। সেখান থেকেই বিয়ে করার কথা মাথায় আসে তার।

কয়েক মাস আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। বিজ্ঞাপনের সূত্রে রিষড়ার বাসিন্দা ইরা রায়ের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। গত ২৭ জুলাই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। এরপর সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের ফ্ল্যাটে সামাজিক বিয়ে হয় তাদের। পুরুষ পুরোহিত নন, সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ করে কবি মীনা রায় বিয়ে দিলেন তাদের।

কনে ইরা রায়ের বয়স ৩৬ বছর। বাবা মারা গেছেন। মা-মেয়ের অনটনের সংসার। কলকাতায় একটি সংস্থায় কাজ করতেন। বছর খানেক আগে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। ইরা বলেন, ‘ভেবেছিলাম, বিয়ে করব না। এক আত্মীয় কাগজে বিজ্ঞাপনের কথা জানান। সব দেখে মনে হলো সুযোগ এসেছে, দেখি। এমন শিক্ষিত, রুচিশীল, মানুষই চেয়েছিলাম। আমি খুশি।’

সমরেন্দ্রনাথ বলেন, কিছু মানুষ যেমন কুমন্তব্য করেছেন, আমার পরিস্থিতি বুঝে অনেকে আবার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানাচ্ছেন। এতদিন চাকরি করেছেন তিনি। তার অবর্তমানে তার স্ত্রীর পেনশনের টাকায় ভালোভাবেই চলবে বলে মনে করেন তিনি।

বয়স্কদের মন ও তাদের নিঃসঙ্গতা কাটানো নিয়ে কাজ করছেন অমিতাভ দে সরকার। সমরেন্দ্রনাথের বিয়ের খবর শুনে তিনি উচ্ছ্বসিত। তার কথায়, বয়স্কদের সমস্যা, একাকীত্ব বোঝার মানসিকতা আমাদের নেই। অনেকে এর ভুল ব্যাখ্যা করেন। তবে এই মানসিকতা বদলাচ্ছে। একাকীত্ব কাটাতে বয়স্ক মানুষজন নিজেদের মনের মতো সঙ্গী খুঁজছেন। এভাবে কেউ যদি ভালো থাকেন, জীবনে বাঁচার রসদ পান, তাতে অন্যদের আপত্তি কোথায়! এতে তো খুশি হওয়ারই কথা।

মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেন, মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে না। ফলে সঙ্গীর চাহিদা থাকে। ওর মধ্যেও একাকীত্ব নিশ্চয়ই কাজ করেছে। তাই আমার মনে হয় উনি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। একজন বয়স্ক মানুষের সমস্যা বা চাহিদা তার জায়গা থেকেই দেখা উচিত। তার ভাবনাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

অভিনেতা দীপঙ্কর দে পঁচাত্তর বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদাহরণও রয়েছে। মোহিত, অমিতাভরা চাইছেন, সমরেন্দ্রদের হাত ধরে এমন উদাহরণ আরো তৈরি হোক। ভালো থাকুন নিঃসঙ্গ মানুষ।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close