বিশেষ প্রতিবেদনব্যাংক-বীমা

পশ্চিমা দেশে বন্ধ হচ্ছে দেশী ব্যাংকের রেমিট্যান্স হাউজ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস। রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের নির্ভরতা বেশি এমন দেশগুলোর তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে একেবারেই বিপরীত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে ওইসব দেশে চালু হওয়া বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ক্ষেত্রে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের দেশগুলোয় চালু করা বাংলাদেশের মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া শত শত কোটি টাকার পুঁজি।

২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোয় মানি এক্সচেঞ্জ চালু করতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের দেশগুলোয় প্রায় দুই ডজন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান চালু করে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যবসায়িক সমীক্ষা ছাড়াই চালু করা এসব মানি এক্সচেঞ্জের প্রায় অর্ধেকই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোও বন্ধের পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কানাডায় চালু করা অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজ। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের উদ্যোগে এ মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ চালু করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় চালু করা অগ্রণী ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ হাউজটিও বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কানাডায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চালু করা মানি এক্সচেঞ্জ। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের চালু করা মানি এক্সচেঞ্জটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালে এনবিএল মানি ট্রান্সফার আইএনসি নামে এক্সচেঞ্জ হাউজটি চালু করেছিল ন্যাশনাল ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জের ১১টি শাখা রয়েছে। এসব শাখার পরিস্থিতিও অবনতির দিকে।

বাংলাদেশী ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি পর্যুদস্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যে চালু করা মানি এক্সচেঞ্জে। ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে দেশের এক ডজনের বেশি ব্যাংক যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে মানি এক্সচেঞ্জ খুলে বসেছিল। কিন্তু বাছবিচার না করে চালু করা ওইসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বেশি দিন টেকেনি। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছয়টি ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। যুক্তরাজ্যে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়া ব্যাংকগুলো হলো বেসরকারি খাতের প্রাইম, পূবালী, এবি, ব্র্যাক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও সরকারের উদ্যোগে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সোনালী ব্যাংক ইউকের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মালিকানার ব্যাংকটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কয়েকটি ব্যাংক এখনো যুক্তরাজ্যে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছে সেগুলোও ধারাবাহিক লোকসান গুনছে। ওইসব মানি এক্সচেঞ্জও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

রেমিট্যান্স বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোয় বাংলাদেশী রেমিট্যান্স হাউজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে বণিক বার্তা। এতে দেশের ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসনের ঘাটতির চিত্রই উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির সমীক্ষা না করেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো ইউরোপের দেশগুলোয় মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান খুলেছে। এক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক কিংবা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য বিদেশে অনেক এক্সচেঞ্জ হাউজ, শাখা ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলা হয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলেছে কোনো প্রকার ব্যবসায়িক সমীক্ষা ছাড়াই। এক্ষেত্রে পরিচালকদের স্বজনদের ব্যাংকে চাকরি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের দেশগুলোয় পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যও কাজ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীনও মনে করেন, বিদেশে মানি এক্সচেঞ্জ চালু কিংবা অন্য যেকোনো কার্যক্রম শুরু করার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকে না। ব্যাংকগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্যই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানি এক্সচেঞ্জ বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলা হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানসহ পরিচালকদের চাহিদাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এ কারণে বেশির ভাগ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানই লাভের মুখ না দেখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

দেশভেদে বিদেশে বাংলাদেশী একটি মানি এক্সচেঞ্জ চালু করতে ৫-১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। লোকসানের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক পরবর্তী সময়ে আরো টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে। এ হিসাবে মানি এক্সচেঞ্জগুলো প্রতিষ্ঠায় কয়েকশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশী ব্যাংকগুলো। এখন একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মূলধনও খোয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, চেয়ারম্যান, পরিচালক কিংবা শীর্ষ নির্বাহীরা এক্সচেঞ্জ হাউজের বৈঠকের নামে বিদেশে যেতে পারবেন, এজন্যও কোনো কোনো ব্যাংক এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলেছে। আবার বিদেশে গেলে যাতায়াত, খাওয়া-থাকাসহ যাবতীয় খরচ ব্যাংক কিংবা এক্সচেঞ্জ হাউজে ভাউচার হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন। কারো সন্তান কানাডায় থাকে, এজন্যও মানি এক্সচেঞ্জ খোলা হয়েছে। এ কারণে উন্নত দেশগুলোর মানি এক্সচেঞ্জগুলো ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। এতদিন বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনের মতো এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণে সামনের সারিতে ছিল। যদিও বাংলাদেশী ব্যাংকগুলো এসব দেশে এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলায় খুব বেশি উৎসাহ দেখায়নি। ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোয় একের পর এক রেমিট্যান্স হাউজ খুলেছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সক্ষমতায় টিকতে না পেরে প্রায় সবই লোকসানের মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এক ডজনের বেশি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। বাকিগুলোও লোকসানের মুখে কোনো রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।

এরই মধ্যে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের দুটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় থাকা ব্যাংকটির দুটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের আয়ও দিন দিন কমছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বণিক বার্তাকে বলেন, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামের মতো আন্তর্জাতিক মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ব্যবসায়িক নীতির কারণে বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলো বিপদে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। একই ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে আমাদের কানাডা মানি এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রেও।

ব্যবসায়িক সমীক্ষা না করেই এসব মানি এক্সচেঞ্জ খোলা হয়েছিল কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. জায়েদ বখত বলেন, সমীক্ষা না করে খোলা হয়েছে, এটি আমার মনে হয় না। তবে আরো সতর্কতার সঙ্গে এসব মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালনার দরকার ছিল।

সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, গ্রিস ও যুক্তরাষ্ট্রে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ আছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকটির মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি মুনাফা করতে না পারায় বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান খুলেছিল বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারণে পাঁচ বছর পরই সেটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংকটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ১ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিতে হচ্ছিল। যুক্তরাজ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বিধিবিধান মেনে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করা খুবই কঠিন। এ কারণে বাংলাদেশী যেসব ব্যাংক যুক্তরাজ্যে মানি এক্সচেঞ্জ খুলেছিল, প্রায় সবাই বন্ধ করে দিয়েছে।

ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ছাড়াও ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী ব্যাংক যেসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান খুলেছে, তার প্রায় সবক’টির ব্যবসায়িক পরিধি সংকুচিত হয়ে এসেছে। বহুজাতিক বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার কারণে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে। যে রেমিট্যান্স হাউজগুলো এখনো মুনাফায় আছে, সেগুলোর আয়ও কমে আসছে।

দেশের মোট রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। অথচ বিদেশের মাটিতে ব্যাংকটির কোনো মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বণিক বার্তাকে বলেন, রেমিট্যান্স আনার জন্য নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের দরকার হয় না। বিশ্বের যেকোনো মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে চুক্তি করেই রেমিট্যান্স আনা সম্ভব। আয়-ব্যয়ের সমীক্ষা করেই আমরা মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের মতো কোনো সাবসিডিয়ারি তৈরি করিনি। তবে আগামীতে আমরা বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি অফিস ও শাখা খোলার পরিকল্পনা নিয়েছি।
/একে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close