জীবন-যাপন

পা দিয়ে বিমান চালান ‘কক্স’

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের জেসিকা কক্স হাতবিহীন জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি তার দুই পা ব্যবহার করে অনায়াসেই প্লেন চালাতে পারেন। এখন তিনি বিমানচালনায় সারা বিশ্বের নারীদের অনুপ্রেরণা।

শুক্রবার (১৭ মে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানায় সিএনএন। কক্সের কাছে তার ডান পা দিয়ে ইয়োক এবং বাম পা দিয়ে থ্রটল নিয়ন্ত্রণ করা কোনো ব্যাপারই না।

কক্স বলেন, অন্য পাইলটরা যা তাদের হাত দিয়ে করেন, আমি তা করি আমার দুই পা দিয়ে। আমার জন্মের পর যখন চিকিৎসক আমাকে নিয়ে এসে বাবা-মাকে বলেন, আপনাদের সন্তানের কোনো হাত নেই, তখন বাবা-মা খুব অবাক পান। আমার মা প্রচণ্ড কষ্ট পান কারণ তার গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক ছিল।

একসময় এয়ারপ্লেনে উড়তে ভয় পেতেন কক্স। তিনি বলেন, শিশু হিসেবে আমি প্রতিবার বাণিজ্যিক ফ্লাইটে উঠতাম এবং সিটে বসেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম। মনে হতো কেউ আগলে রাখলে আমি স্বস্তিবোধ করতাম।

কক্স বলেন, একটি ছোট প্লেনে এক ফ্লাইট সবকিছু পালটে দেয়। প্লেনটির পাইলট আমাকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে এসে সেটি চালাতে বলেন। আমার মনে হয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভয় না পেয়ে তা মোকাবেলা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কক্স ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা থেকে স্নাতক পাসের পর ২০১৫ পাইলট হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। কিন্তু বিষয়টা মোটেও সহজ ছিল না। তাই একজন ডেডিকেটেড ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর খোঁজার প্রয়োজন পড়ে তার।

কক্স বলেন, আমি অনেক ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর ও কন্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। নানা ভুল-ভ্রান্তির মধ্য দিয়ে বিমানচালনায় সিদ্ধহস্ত হতে প্রায় তিন বছর লেগে যায় আমার। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার সামর্থ্য অনুযায়ী একটি প্লেন খোঁজা।

কক্সকে ২০০৮ সালে লাইট স্পোর্ট এয়ারক্র্যাফট এরকুপ চালানোর অনুমতি দেয় ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তিনি বলেন, অনেক প্রশ্ন ছিল। অনেক উদ্বেগ ছিল। এটি সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও অনেক সন্দেহ ছিল।

একটি স্বাভাবিক শৈশব পেয়েছেন কক্স। তিনি সরকারি স্কুলে যোগ দেন এবং নিয়মিত পাঠক্রম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডেই বেশি সম্পৃক্ত থাকতেন। কক্স বলেন, প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর আমি নাচ, সাঁতার ও মার্শাল আর্ট টায়েকোনডো ও স্কাউটিংয়ে যোগ দিতাম।

কিন্তু দুই হাত না থাকায়, তাকে বেশিরভাগ সময় ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হতো। তিনি বলেন, আমি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করতাম কিন্তু আমাকে প্রায় বলা হতো যে আমি পারবো না। কারণ আমার দুই হাত নেই।

এরপর কক্স কৃত্রিম হাত ব্যবহার করা শেখেন কিন্তু তিনি কখনও এতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই এর ওপর নির্ভরশীল হতে চাইনি। আমি ভাবতাম যে কৃত্রিম হাতের চেয়ে আমার পা অনেক ভালো।

এখন কক্স শুধু একজন পাইলট নয়, তিনি একজন স্বীকৃত স্কুবা ড্রাইভার, টায়েকোনডোতে একজন থার্ড-ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট। এছাড়া একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে তিনি ২০টির বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close