দেশজুড়ে

ফিরে যেতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের কাফির মোনাফেক বলে খুন করা হচ্ছে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে হত্যার শিকার হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। যাদের ‘কাফির’ বা ‘মোনাফেক’ আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বলে জানায় ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

ভেতরে ভেতরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে এ পর্যন্ত প্রত্যাবাসনে সম্মত ৩২ জনের মতো সাধারণ রোহিঙ্গা খুন হয়েছে বলে জানায় একাধিক সূত্র। যাদের মধ্যে শিক্ষিত তিন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় খুন হয়।

এদিকে প্রত্যাবাসনবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলা আরও একাধিক সশস্ত্র গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে।

যাদের বেশ কজন ইতোমধ্যে খুনও হয়েছে। তবে তারা সংখ্যায় কম, আর্থিকভাবে দুর্বল ও অস্ত্রশস্ত্রও তেমন না থাকায় প্রত্যাবাসনবিরোধী সক্রিয় ওই গ্রুপটি তাদের কোণঠাসা করে রেখেছে। মোনাফেক দাবি করে হত্যার বাইরে আরও কমপক্ষে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয় প্রভাবশালী ওই গ্রুপটির কথার অবাধ্য হওয়ায় কারণে।

রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ এ দ্বন্দ্বই এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় অন্তরায়। শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পের ভেতরে যাদের ‘কাফের’ বা ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে সন্দেহ করছে অপরপক্ষ, তারাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সম্মত। কিন্তু বিরোধী ওই গ্রুপের অভিযোগ, এসব ব্যক্তিরাই এখনো ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের গোয়েন্দাদের তথ্য দেয়।

এদিকে ক্যাম্পের ভেতরেই একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে যারা ‘কাফের’ চিহ্নিত করার কাজ করে। এ গ্রুপের ভাষ্য, যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই ‘মোনাফেক’। কোনো ভালো মানুষকে হত্যা করা হয়নি। ক্যাম্পের ভেতরে অনেকে আছে যারা মিয়ানমার বাহিনীর কাছে ‘তথ্য পাচার’ করে এমন অভিযোগও করা হয় হত্যার পর।

পুলিশ বলছে, ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে গত দুই বছরে অন্তত ৪৫ জন খুন হয়েছে, যার বেশ কিছু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ক্যাম্পের ভেতরে তৎপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা না শুনলে পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ।

এ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের মধ্যে গত দুই বছরে ক্যাম্পের ভেতরে যারা কিছুটা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, তাদের বেশ কয়েকজনকেও হত্যা করা হয়েছে। কারণ, সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে কেউ প্রভাবশালী হয়ে উঠুক, তা চায় না শক্তিশালী প্রত্যাবাসনবিরোধী ওই গ্রুপটি।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও স্থানীয় ও ক্যাম্প সম্পৃক্ত কাজে যুক্ত একাধিক সূত্র এসব হত্যাকাণ্ডকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বললেও একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার এবং প্রত্যাবাসনবিরোধী গোষ্ঠীই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে ক্যাম্পগুলোতে।

যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কক্সবাজারের সবকটি ক্যাম্প। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলারও সাহস পাচ্ছে না সাধারণ রোহিঙ্গারা। সব মিলিয়ে আপাত দৃষ্টিতে বাইরে থেকে ক্যাম্পগুলোকে শরণার্থী ক্যাম্প এবং শান্ত মনে হলেও কার্যত ভেতরে ভেতরে ক্রমেই বেড়ে চলেছে অস্থিরতা।

যেখানে দিনের চিত্রের সঙ্গে রাতের চিত্রের কোনো মিল নেই। রাতের আঁধার নামার সাথে সাথেই ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় সশস্ত্র পদচারণা। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পর্যাপ্ত রাস্তা-ঘাটও নেই ক্যাম্পগুলোতে। যে কারণে ভেতরে বড় কয়েকটি সড়ক তৈরি করা হয়েছে— যেগুলো ‘আর্মি রোড’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব রাস্তার মাধ্যমেও সব জায়গায় পৌঁছনো যায় না।

এমন অসংখ্য স্পট রয়েছে, যেখানে পৌঁছাতে পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। ফলে যেকোনো অপরাধ করে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়াও সম্ভব। রাতের বেলায় এসব জায়গায় যেতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপদ বোধ করেন না। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়েই সশস্ত্র সবকটি গোষ্ঠীই অপরাধ সংগঠনে সক্রিয় রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং স্থানীয়দের ভাষ্য, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ক্যাম্পের ভেতরে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

সেখানে ইতোমধ্যে দিনের বেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো বাংলাদেশের, অন্যদিকে রাতের বেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর— এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী চায় না রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখেই তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চায়।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close