শিল্প-বানিজ্য

বাজেট কী, দেয়া হয় কেন ?

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: ‘বাজেট’ কী বা কত প্রকার, সেটা সম্পর্কে আমরা অনেকেই খুব বেশি জানি না। তবে বাজেট কথাটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। এককথায় বললে, বাজেট হচ্ছে একটি দেশের এক বছরের সম্ভাব্য সব আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব-নিকাশের বিবরণী। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারের সম্ভাব্য ব্যয়, রাজস্ব ও অন্যান্য আয়ের একটি পূর্বাভাসও বলা যায় এই বাজেটকে।

কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে কতটুকু আয় প্রাপ্তির আশা করে এবং বিভিন্ন খাতে কী পরিমাণ ব্যয় করতে চায়, তার সুবিন্যস্ত হিসাবকে সরকারি বাজেট বলে।

বাংলাদেশ সরকারের একটি বাজেটের সময়কাল হচ্ছে এক অর্থবছর, যা ১লা জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ধরা হয়। মূলত সরকারের এ নির্দিষ্ট সময়ে দেশের আর্থিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু প্রতিফলন থাকে বাজেটে। বাংলাদেশের সংবিধানে বাজেট শব্দটি ব্যবহারের পরিবর্তে সমরূপ শব্দ ‘বার্ষিক আর্থিক বিবরণী’ ব্যবহার করা হয়েছে।

বাজেট হলো সরকারি অর্থব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। বাজেটে যেমন সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ঘটে, তেমনি দেশের অর্থনীতির চিত্র ফুটে ওঠে। বাজেটে শুধু সরকারি সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবই থাকে না; বরং আয়-ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে কীভাবে ঘাটতি পূরণ হবে এবং ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হলে সে উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে কী করা হবে ইত্যাদি বিষয়ও বাজেটে লিপিবদ্ধ থাকে।

বাংলাদেশে সরকার বাজেট প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে। পরে জাতীয় সংসদে তা অনুমোদন নিতে হয় এবং চূড়ান্তভাবে রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে সরকারের নির্ধারিত আয়-ব্যয় ও তার পদ্ধতি কার্যকর হয়।

বাজেটের প্রকারভেদ: সরকারের আয়-ব্যয়ের প্রকৃতি অনুযায়ী বাজেটকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হচ্ছে: চলতি বাজেট ও মূলধন বাজেট।

চলতি বাজেট: যে বাজেটে সরকারের চলতি আয় ও চলতি ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়, তাকে চলতি বাজেট বলে। চলতি আয় কর রাজস্ব ও করবহির্ভূত রাজস্ব হতে সংগৃহীত হয়। কর রাজস্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: মূল্য সংযোজন কর, আয়কর, সম্পত্তি কর ও ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি।

করবহির্ভূত রাজস্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ও মুনাফা, ঋণের সুদ ইত্যাদি। বাজেটের এ অর্থ ব্যয় হয় সরকারের প্রশাসনিক কার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও দেশ রক্ষার জন্য। এ বাজেটের ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে শিক্ষা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু এ খাতগুলো অপরিবর্তিত থাকে, তাই প্রতিবছর বাজেটে এ ব্যয়ের পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন হয়। চলতি বাজেটে সাধারণত উদ্বৃত্ত থাকে।

মূলধন বাজেট: সরকারের মূলধন আয় ও ব্যয়ের হিসাব যে বাজেটে দেখানো হয়, তাকে মূলধন বাজেট বলে। এ বাজেটের মূল লক্ষ্য হলো দেশের ও জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করা। সরকারের যে অর্থ আয় হয়, তা দিয়ে দেশ পরিচালনায় যত ধরনের ব্যয় আছে তা পূরণ করে বাকি অর্থ দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা অর্থকে উন্নয়ন বাজেটও বলে। এই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প (রাস্তা নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, গ্রামীণ উন্নয়ন, বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল তৈরিসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ) বাস্তবায়ন করা হয়। এ লক্ষ্যে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় উৎস হতে অর্থসংস্থান করে।

অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎস হলো রাজস্ব উদ্বৃত্ত বেসরকারি সঞ্চয় ব্যাংক ঋণ ও অতিরিক্ত কর ধার্য করা ইত্যাদি। আর বৈদেশিক আয়ের উৎস হলো: বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক অনুদান ইত্যাদি।

এদিকে আয় ও ব্যয় সমান কি না, সেই প্রশ্নেই রাষ্ট্রের বাজেট দুই রকমের হয়ে থাকে। যেমন: সুষম বাজেট ও অসম বাজেট

সুষম বাজেট: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সরকারের প্রত্যাশিত আয় এবং সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ সমান হলে তাকে সুষম বাজেট বলে। এ বাজেটে আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যয় করা হয় বলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বা দ্রব্যের দাম দ্রুত বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম থাকে, যার ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বেকারত্ব দূর করতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে এবং জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় এটি সহায়ক নয়। সুষম বাজেটে মোট আয় মোট ব্যয়ের সমান হয়।

অসম বাজেট: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বা আর্থিক বছরে সরকারের প্রত্যাশিত আয় এবং সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ সমান না হলে তাকে অসম বাজেট বলে।

সরকারের আয় ও ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে অসম বাজেটকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে: উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেট

উদ্বৃত্ত বাজেট: কোনো আর্থিক বছরে সরকারের প্রত্যাশিত আয় অপেক্ষা সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ কম হলে, তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে। অর্থাৎ, এ বাজেটে ব্যয় অপেক্ষা আয়ের পরিমাণ বেশি।

ঘাটতি বাজেট: কোনো আর্থিক বছরে সরকারের প্রত্যাশিত আয় অপেক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। সরকার বাজেটের এ ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ, নতুন অর্থ সৃষ্টি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান গ্রহণ করে।

/এএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close