আমদানি-রপ্তানীপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

বিশ্বমানের পাটের জুতা রফতানি হচ্ছে উন্নত দেশে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ এক সময় সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বি। মাঝে এর সুন্দর স্মৃতি হারালেও ফিরে পেতে চলেছে স্বর্ণালি যুগ। পাটের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে কাজ করছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের অ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

এ প্রতিষ্ঠানে পাট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব বিশ্বমানের নানা ডিজাইনের জুতা। প্রতি মাসে এ কারখানা থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার পিয়ার জুতা পাঠানো হয় স্পেন, ইতালি জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে। উন্নত দেশে ফ্যাশন শোতেও এসব জুতা একাধিকবার প্রদর্শিত হয়েছে বলে দাবি প্রস্তুতকারী কোম্পানির।

কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক অসহায় নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এ পরিবেশবান্ধব জুতার রফতানি বাড়ানোর মাধ্যমে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

রঘুনাথপুর গ্রামের একটি মাঠে অবস্থিত ‘অ্যামাস ফুটওয়ার’ কারখানায় গেলে দেখা যায়, জুতার প্রধান কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে পাট থেকে তৈরি এক ধরনের সুতা। এছাড়া রাবার গলিয়ে এখানেই মেশিনের ডাইসে ফেলে তৈরি করা হচ্ছে জুতার সোল। একইভাবে নকশা ও সেলাইযোগ্য পাটের সুতা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপর রাবারের সোলের ওপর কাটা কাপড়ের অংশ বসিয়ে পাটের সুতায় হাতে নকশার সেলাই দেয়া হচ্ছে।

এ কাজগুলো কারখানায় বসে করছেন নারীরা। আবার জুতা তৈরির মালামাল মেশিনের প্রাথমিক কাজ শেষ করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। পরে বাড়িতে বসেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা কাজ করছেন।

বর্তমানে কোম্পানিতে ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চার শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাড়িতে বসে একজন নারী কমপক্ষে ৩০ পিয়ার জুতার কাজ করতে পারেন। প্রতি পিয়ারের জন্য দেয়া হয় আট টাকা। এতে বাড়িতে বসেই প্রতিদিন ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারেন নারীরা। এছাড়া যারা কারখানায় কাজ করেন তাদের দক্ষতার বিবেচনায় চার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়।

অ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবাইদুল হক রাসেল জানান, ২০১৩ সালে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং বিষয়ে বিবিএ শেষ করে তিনি ঢাকায় গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর এলাকার মানুষ ও দেশের জন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় আনেন। ২০১৬ সালে সরকারি সব নিয়ম মেনে কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ৪৪ শতাংশ জমিতে পাটের জুতা তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন।

তিনি বলেন, গ্রাম অঞ্চল হওয়ায় প্রথমে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বায়াররা এ জুতাগুলো কেনেন। এর আগে কোম্পানির পক্ষ থেকে পাটের তৈরি এসব জুতা বিভিন্ন দেশের মেলায় তোলা হয়। এতে নজর কাড়ে বায়ারদের।

ওবাইদুল হক রাসেল বলেন, ২০১৮ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শো ও মেলায় আমাদের জুতাগুলো প্রদর্শিত হয়। এভাবে বিভিন্ন দেশের মেলায় পাটের তৈরি এসব জুতা তোলা হয়। এতে আস্তে আস্তে বিশ্ব বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকে।

তিনি আরো বলেন, এ কারখানার তৈরি জুতা দুই থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে বিক্রি করা হয়। চাহিদার কারণে দুই ডলারের জুতা বিদেশে ১৫ থেকে ২০ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া নিজেই বিশ্ব বাজারে এসব জুতার মার্কেটিং করি।

অ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন, ছয়টি স্তরে এ কারখানায় জুতা তৈরি হয়। এখানে অধিকাংশ কাজ হাতেই হয়।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close